চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা ৩৮ জনকে আসামি করলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও একজনসহ মোট ৩৯ জনকে আসামি করা হয়।সোমবার (২৫ আগস্ট) চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দীন অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। অভিযোগপত্রে থাকা আসামিরা হলেন – চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, রিপন দাশ, চন্দন দাশ মেথর, রাজীব ভট্টাচার্য্য, আমান দাশ, শুভ কান্তি দাশ, বুঞ্জা, বিকাশ, রনব, বিধান, রুমিত দাস, রমিত প্রকাশ দাস, নয়ন দাশ, বিশাল, ওমকার দাশ, সামীর, লালা দাশ, সোহেল দাশ, বিগলাল, শিব কুমার, ওম দাস, পরাশ, গণেশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাশ, সুমিত দাশ, সনু দাস, সকু দাশ, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, দ্বীপ দাশ ও সুকান্ত দত্ত।আদালত সূত্র জানায়, চার্জশিটে থাকা প্রধান আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছে মোট ২০ জন। আর পলাতক রয়েছে ১৯ জন। গ্রেপ্তার আসামিদের আজ নিরাপত্তাজনিত কারণে সশরীরে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। তবে তারা ভার্চ্যুয়ালি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সংযুক্ত ছিলেন।চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি আইনজীবী রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, আদালত শুনানি শেষে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন এবং পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। জনাকীর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা আসামিদের সশরীরে উপস্থিত করা হয়নি। তবে তাদেরকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত করা হয়েছে। মামলার বাদী ও হত্যার শিকার আইনজীবী আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এজাহারনামীয় তিন আসামি গগন দাশ, বিশাল দাশ ও রাজকাপুর মেথরকে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন। এছাড়া সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তদন্তে প্রাপ্ত সুকান্ত দত্ত নামে একজনের অব্যাহতির প্রার্থনা করেছেন। অথচ সুকান্ত দত্ত সিএমপির অস্ত্র, মাদক, চুরি, ডাকাতিসহ আটটি মামলার আসামি। ঘটনার সঙ্গে সুকান্ত দত্তের সম্পৃক্ততা থাকার কথা তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার পর মূল হত্যাকারীদের সঙ্গে তার ছবি ভাইরাল হয়েছে। সুতরাং তাকে আসামি হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত রাখার আবেদন জানানো হলে আদালত এই আবেদন গ্রহণ করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এ মামলায় আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের আদালত। সেদিনই ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে তার জামিন ঘিরে সংঘর্ষে জড়ান চিন্ময়ের ভক্তরা। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। আলিফ হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপ দেন চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করে।গত ১ জুলাই আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।