পত্রিকার পাতা
ঢাকারবিবার , ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কর্পোরেট
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  8. খেলাধুলা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. ধর্ম
  14. পর্যটন
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সব খবর

জামদানির টুকরোয় বোনা নারীর গল্প

Md Abu Bakar Siddique
জুলাই ১৭, ২০২৫ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

একটি শাড়ি হয়তো পুরোনো হয়ে পড়ে থাকে আলমারির তলায় কিংবা কোনো চৌকাঠের নিচে চাপা পড়ে যায় সময়ের ধুলায়। অথচ সেই জামদানির একটি টুকরোও ধরে রাখে ইতিহাস, উত্তরাধিকার, ভালোবাসা। এমনই নরম মায়া আর মিহি শিল্পভাষায় রচিত হলো সেলিব্রেটিং জামদানি– একটি দিনব্যাপী প্রদর্শনী, যা আয়োজন করে ‘শান্তিবাড়ি’।ঢাকার লালমাটিয়ার একটি অ্যাপার্টমেন্টে ৪ জুলাই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয় এ উৎসব। প্রদর্শনী ছিল উন্মুক্ত সবার জন্য– আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করেন ইউনেস্কোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. সুসান ভাইজ, হেড অব কালচার কিজি তাহনিন, ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা ও অভিনেত্রী তানজিকা আমিন।

এ আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন তিন নারী উদ্যোক্তা, যারা প্রত্যেকে জামদানিকে ভিন্ন ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। তবে একটি জায়গায় এসে তাদের ভাবনা মিলে যায়– জামদানির পুরোনো সৌন্দর্যকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনা, পরিবেশবান্ধব শিল্পে রূপান্তর এবং নারীর সৃজনশীলতা সমাজের সামনে তুলে ধরা।

‘বেনে বউ জামদানি’-এর উদ্যোক্তা ফারহানা মুনমুন বললেন, ‘প্রত্যেক নারীর জীবনেই একটা সময় আসে, যখন জামদানি শুধু পোশাক থাকে না, হয়ে ওঠে স্মৃতি। সেই স্মৃতিগুলোকে আমরা নতুন রূপে ফিরিয়ে দিচ্ছি।’ তাঁর স্টলে পুরোনো জামদানির অংশ দিয়েই তৈরি হয়েছে– প্যাচওয়ার্ক ল্যাম্পশেড, হাতে বানানো চুড়ি, টিপ, হালকা ব্যাগ, কটি আর জুতা।

‘বুনিয়া বাই অন ক্লাউড নাইনের’ ড. আফরিন আহমেদ এ শিল্পে যোগ করেছেন ব্যবহারিকতা ও পরিমিতিবোধ। ঘর সাজানোর জন্য ছোট ছোট শোপিস, জামদানি কাপড়ের কানের দুল ও অলংকার তাঁর স্টলে ছিল। আফরিন বলেন, ‘জামদানি শাড়ি অনেকে কেনেন না, দাম ও ব্যবহারযোগ্যতার চিন্তা থেকে। তাই এমন কিছু বানানোর চেষ্টা করেছি, যা দৈনন্দিন ব্যবহারেও মানিয়ে যায় এবং ঐতিহ্যকে সঙ্গে রাখে।’

এদিকে ড. জিনিয়া রহমানের ‘পালং খ্যিয়ং’ ছিল এ প্রদর্শনীর সবচেয়ে শিল্পময় এক কোণ। তাঁর স্টলে পাওয়া যাচ্ছিল খাঁটি জামদানি শাড়ি এবং জামদানির ফেলে দেওয়া অংশ থেকে তৈরি করা অনন্য শোপিস। জামদানি কেবল এক ধরনের বুনন নয়, ‘এটি গল্প, এটি আত্মার স্পর্শ। তাঁতির প্রতিটি সুতার টানে ইতিহাস বাঁধা আছে।’

প্রদর্শনীর দর্শনার্থীদের মধ্যেও ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা। বনানী থেকে আসা আয়েশা জামান জানালেন, ‘মায়ের পুরোনো জামদানির মতো একটা প্যাচওয়ার্ক দেখে মনটা ভার হয়ে গেল। ভাবছি টেবিল ল্যাম্পটাও নিয়ে যাব।’ এক ভিজে চোখের দর্শক নার্গিস রহমান বলেন, ‘শাড়ি পরা হয় না আজকাল কিন্তু আজকে যেন মনে হলো, শাড়ি আবার আমাকে ডাকছে।’

‘শান্তিবাড়ি’র প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ সাবরিনা শারমিন বাঁধন বলেন, ‘জামদানি নিয়ে অনেক আয়োজন হয়, কিন্তু আমরা চেয়েছি– নারী, শিল্প, পরিবেশ এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে। পুরোনো শাড়িকে শিল্পে রূপান্তরের এই চর্চা শুধু বাণিজ্য নয়, এক ধরনের নীরব সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। আমরা চাই জামদানি শুধু তাঁতের খাঁচায় বন্দি না থেকে নারীর প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠুক।’

শান্তিবাড়ির এ আয়োজন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়– এ ছিল পুরোনো কাপড়ের গায়ে নতুন গল্প লেখার চেষ্টা, নারীর হাতের ছোঁয়ায় ইতিহাসকে পুনরায় জীবন্ত করে তোলার কবিতা। পুরোনোকে ফিরে পাওয়া নতুন করে, সজীবতায়, সৌন্দর্যের ছায়ায়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।