লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মাজহার (অবঃ)
বিশ্লেষক
ঢাকার এক ব্যস্ত ব্যাংকে চাকরি করেন সজীব ভাই। ব্যাংকে তার টেবিল আছে, চেয়ার আছে (যেটা বসলে কঁক করে উঠে), আর একটা কম্পিউটার আছে—যেটা মাঝে মাঝে কাজ করে। কিন্তু সজীব ভাইয়ের আসল শক্তি হলো—ফেসবুক স্ট্যাটাস।
ব্যাংক খোলার আগেই তিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ব্যবসায়িক দুর্নীতি—সবকিছু সমাধান করে ফেলেন এক স্ট্যাটাসে।
“এই দেশের মানুষ ডেডিকেটেড না। জাপানকে দেখেন! সময়ানুবর্তিতা শিখুন!”
এই স্ট্যাটাসটা তিনি তখন দেন, যখন সামনে তিনজন গ্রাহক দাঁড়িয়ে আছেন—অ্যাকাউন্ট আপডেট করানোর জন্য। কিন্তু ভাই ব্যস্ত—দেশ বদলাচ্ছেন!
দুপুরে তিনি হয়ে যান ডাক্তার সজীব।
“এই দেশের ডাক্তারদের কোনো সহানুভূতি নাই, শুধু টাকার পেছনে ছোটে।” লেখাটা লেখার সময় তিনি ভুলে যান, গত বছর মিথ্যে পিঠ ব্যথা দেখিয়ে তিন মাস ছুটি নিয়েছিলেন।
বিকেলে তিনি শিক্ষাবিদ সজীব।
“শিক্ষকরা এখন আর ঠিকমতো পড়ান না। মানে নাই শিক্ষা ব্যবস্থার।”
ঠিক এই পোস্টের আগে তিনি একটা ভুয়া কাগজ দেখে এক ছাত্রের অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ করে দিয়েছেন—একবার কাগজটা পড়েও দেখেননি।
সন্ধ্যার পরে সজীব ভাই হয়ে যান আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
“রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে আসল কারণ সবাই জানে না।”
অর্থনীতিতে ফেইল করেও এই সাহস সত্যিই প্রশংসনীয়।
রাতে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন ব্যবসায়ীদের উপর:
“ব্যবসায়ীরা শুধু লাভের পেছনে ছুটে। দেশের জন্য কিছুই করে না!”
তবে দিনের বেলা তিনি নিজে এক ক্লায়েন্টকে ‘আন্ডার দ্য টেবিল’ টাকা নিয়ে লোন পাস করিয়ে দেন, সেটা কেউ জানে না।
সজীব ভাইয়ের দেশপ্রেম বেড়ে যায় ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। প্রোফাইল ফ্রেম বদলান, রবীন্দ্রনাথের ভুল কোট দেন, আর CAPSLOCK এ লেখেন:
“দেশের জন্য জান দেব!!”
তবে যা করেন না:
- সময়মতো ব্যাংকে আসা
- নিজের কাজ ভালোভাবে শেখা
- গ্রাহকের সাথে ভালো ব্যবহার
- ফেক নিউজ না শেয়ার করা
একদিন অডিট এল। রিপোর্ট বলল:
- ১৭টা মেজর ভুল
- ৫টা মিসিং ফাইল
- ১টা গ্রাহকের অভিযোগ
- আর ০% জ্ঞানহীনতা নতুন ব্যাংকিং নিয়মের উপর
জিজ্ঞেস করলে সজীব ভাই বলেন:
“এসব ছোটখাটো বিষয়। আসল সমস্যা হলো দেশের রাজনীতি।”
সবাই ফেসবুকে তালি দিলো। রাতে ঘুমানোর আগে সজীব ভাই আরেকটা স্ট্যাটাস দিলেন:
“যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে করলে দেশ এমন থাকতো না!”
পেলেন ৩৪৮টা লাইক, ৭২টা শেয়ার।
তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, এক যুদ্ধজয়ী যোদ্ধার মতো।
মোদ্দা কথা….
এই ফেসবুক প্রজাতন্ত্রে সবাই বিশেষজ্ঞ—শুধু নিজের কাজ ছাড়া। দেশপ্রেম আসে প্রোফাইল ফ্রেম দিয়ে নয়—আসে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে।