ঝিনাইদহের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া শারমিন নাহার অনি শৈশব থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করছেন। স্বাভাবিক কথা বলতে, হাঁটতে-চলতে কিংবা স্বাভাবিক কাজ করতে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হলেও তিনি কখনো হার মানেননি। পরিবারের সাহস আর নিজের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিকে সঙ্গী করে তিনি শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিয়ে যান। অনেকে ভাবত—প্রতিবন্ধকতা হয়তো তাকে পিছিয়ে রাখবে, কিন্তু অনি তাদের ভুল প্রমাণ করেন। তিনি সফলভাবে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং এরপর খুঁজতে থাকেন নিজের জীবনের লক্ষ্য। অনি বিশ্বাস করতেন—চাকরির পিছনে না ছুটে, নিজের কিছু করার মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের জীবনে নয়, সমাজেও পরিবর্তন আনতে পারবেন। EDP প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এই স্বপ্ন পূরণের পথে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক আসে যখন অনি এডিবির অর্থায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিসিপ এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত Entrepreneurial Development Programme (EDP)-এ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। প্রশিক্ষণ চলাকালীন এক মাস যথাসময়ে ক্লাসে উপস্থিতি ও নিজের ব্যবসায় পরিকল্পনা ভালভাবে রপ্ত করেন। এখানে তিনি ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ডিজিটাল স্কিলসহ উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু শিখেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন অনি উপলব্ধি করেন—প্রতিবন্ধকতা তার জন্য সীমাবদ্ধতা নয়, বরং অনুপ্রেরণা। তিনি দৃঢ় সংকল্প নেন নিজের দক্ষতা ব্যবহার করে একটি উদ্যোগ গড়ে তুলবেন। অবশেষে, তিনি শুধু EDP গ্রাজুয়েট হিসেবে উত্তীর্ণ হননি, সকলের ভোটে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় (Most Popular) উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন। উদ্যোগের সূচনা: প্রশিক্ষণ শেষে অনি ঝিনাইদহেই ছোট আকারে একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। তার খামার থেকে মুরগি ও ডিম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে । পরে তিনি অনলাইনে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন, যা তার ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। শুরুতে মূলধন সংকট, বাজারে প্রতিযোগিতা এবং অনেকের অবিশ্বাস—এসব বাধা আসলেও অনি হাল ছাড়েননি। তিনি ধীরে ধীরে গ্রাহক আস্থা অর্জন করেন এবং তার ব্যবসা একটি স্থায়ী রূপ নেয়। অনুপ্রেরণা ও সাফল্য: আজ অনি শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, বরং ঝিনাইদহের তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রেরণার উৎস। তিনি দেখিয়েছেন— শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো স্বপ্নকে থামাতে পারে না। সঠিক প্রশিক্ষণ, ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে নারীরা সমাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা মানে শুধু নিজের উন্নয়ন নয়, বরং সমাজের উন্নয়নেও অবদান রাখা। অনি’র স্বপ্ন এখন আরও বড়। তিনি চান—আগামী দিনে তার প্রতিষ্ঠান আরও বড় হোক, কর্মসংস্থান তৈরি হোক, আর অন্য প্রতিবন্ধী নারীরাও যেন তার মতো নিজের স্বপ্ন পূরণে সাহসী হয়ে ওঠে।