X

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিপদে অর্থনীতি

দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে কোন্দল, হানাহানি, মব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এসবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরাও সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে এবং যেভাবে ক্রমেই অবনতি হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একক প্রচেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের মনে আশা জাগায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধে জড়িত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বাধাও দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের হতাশ করে। অন্যদিকে এসব অপরাধমূলক ঘটনার কোনো কোনোটিতে সরকারের উদাসীনতা বা দেখেও না দেখার ভাব করা ব্যাপক সমালোচনারও কারণ হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এরূপ অবনতিতে দেশের অর্থনীতি এখন এতটাই ঝুঁকিতে যে এ অবস্থাকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা পরিসংখ্যানের মাত্রা ও পরিধির চেয়েও অনেক বেশি হতাশাব্যঞ্জক। শহরের তুলনায় বর্তমানে গ্রামগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক বেশি নাজুক। কিন্তু আলোচনার মূলধারায় গ্রামের প্রকৃত অবস্থার কোনো প্রতিফলন নেই।

এমতাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি আরো অবনতি ঘটে, তাহলে ওই গ্রামীণ কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। ফলে গ্রামের মানুষ এখন শহরের মানুষের তুলনায় অনেক বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। অবধারিতভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর।

উল্লেখ্য, সদ্যঃসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমতে কমতে ১.৭৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকলে অবধারিতভাবেই তা আরো নিচে নেমে যাবে।

কিন্তু দেশের নীতিনির্ধারকরা কি বিষয়টি নিয়ে এতটুকু দুশ্চিন্তাবোধ করছেন?
শিল্প ও ব্যবসা খাতে নতুন বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ এটিই এখন কর্মসংস্থানের মূল ক্ষেত্র। কিন্তু গত অর্থবছরে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি যেভাবে ব্যাপক হারে কমে গেছে এবং একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের প্রবাহও যেভাবে স্থবির হয়ে আছে, তাতে করে ধারণা করা যায়, চলতি অর্থবছরেও বিনিয়োগ না বাড়ার আশঙ্কাই সর্বাধিক। এর মধ্যে যদি সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা বাড়তেই থাকে, তাহলে বিনিয়োগ যে আরো কমে যাবে, সেটি প্রায় অবধারিত। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষির মতো শিল্প খাতেও প্রবৃদ্ধির হার ব্যাপকভাবে কমে গেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর এ সময়ে মব সৃষ্টি করে ও অন্যান্য উপায়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে।

অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও প্রবৃদ্ধির ধারা এখন নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে গিয়ে দাঁড়াতে পারে মাত্র ৫.৯ শতাংশ। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিশীল ধারা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিলে অর্থবছর শেষে এই প্রাক্কলনও টিকবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। এবং আশঙ্কা করা যায় যে সে ক্ষেত্রে তা সাড়ে ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই হার ছিল মাত্র ৩.৩ শতাংশ।

সব মিলিয়ে বলা চলে, দেশের বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যদি উন্নতি ঘটাতে হয় বা নিদেনপক্ষে বর্তমান অবস্থা টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে সর্বাগ্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে হবে। নইলে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি বড় ধরনের সংকটের মধ্যে নিপতিত হয়, তাহলে তাতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু সেটি যাতে কিছুতেই এবং কোনোভাবেই না ঘটে, সেটিই সবার কাম্য। আর তাই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধনের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন আয়োজনের দিকেই অধিক মনোযোগী হওয়া জরুরি বলে মনে করি।

লেখক : অ্যাজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings