বর্ষার আগমনী বার্তায় ঝরছে বৃষ্টি। তবে এবার আগাম বর্ষা এলেও আগাম বন্যার কোনো লক্ষণ নেই। এমনকি উজানেও (দেশের ওপারে আসাম, মেঘালয়, বিহার) ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাবে দেশে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে। এতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও উত্তরে বন্যার হবে না বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদ ও পানিবিজ্ঞানীরা।
দেশে প্রতি বছর মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে জুনের প্রথম সপ্তাহে। এবার ইতিমধ্যে আকিয়াবে অবস্থান করা মৌসুমি বায়ু আগামীকাল শনি বা রবিবারের মধ্যে টেকনাফ উপকূলে প্রবেশ করার কথা রয়েছে। এ আগাম আগমনীর কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত টানাবর্ষণ হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। দেশের উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদের ডান তীরের রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। নির্মাণের আগেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়রা বন্যার শঙ্কা করছেন বলে আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
আগাম বন্যার শঙ্কা আছে কি: এ বছর আগাম বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের মুখপাত্র ও নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ১০ দিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে থাকি। এ সময়ের মধ্যে কোনো বন্যা হওয়ার সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। তবে কোথাও বিপদসীমার ওপর ওঠেনি। আর এ পানি আজকের পর (বৃহস্পতিবার) থেকে কমে আসবে। এ ছাড়া উজানেও (দেশের বাইরে ভারতে) ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। তাই সেখানের পানিও আসার সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ছাড়া পুরো দেশে বন্যা হয়ে থাকে উজান থেকে আসা অতিরিক্ত পানির কারণে। তাই উজানে ভারী বর্ষণ না হলে অস্বাভাবিক বন্যার সুযোগ নেই। এ ছাড়া দেশে জুলাই-আগস্ট মাসে স্বাভাবিকভাবেই বন্যা হয়ে থাকে। যে বন্যার সঙ্গে আমাদের অভিযোজন রয়েছে।’আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান মনসুন ফোরামের আলোচনা অনুযায়ী এবার মৌসুমি বৃষ্টিপাত বেশি হবে। যেহেতু মৌসুম শুরুর আগে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই তাই আগেভাগে বন্যা হওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে জুনের শেষে কিংবা জুলাই মাসে বৃষ্টি বাড়তে পারে।’
গত বছর আগস্টে কুমিল্লা ও ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার পর ভারত থেকে বৃষ্টিপাতের উপাত্ত যথাযথভাবে না পাওয়ার কারণে বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয়রা প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এবার ভারতের নদনদীর পানির ও সেখানকার বৃষ্টিপাতের উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান বলেন, ‘আমরা ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় সেখানকার নদীগুলোর উপাত্ত পেয়ে থাকি। তাই বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
সাগরের নিম্নচাপ বাড়াবে বৃষ্টি : এবার মৌসুমি বায়ু একটু আগে প্রবেশ করছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম বলেন,‘সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং তা থেকে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা হয়তো বাড়বে। আর এসব বৃষ্টি অভ্যন্তরীণ বৃষ্টি। ফলে এ বৃষ্টিতে আগাম বন্যার কোনো সুযোগ নেই।’
নিম্নচাপের প্রভাবে মৌসুম শুরুর আগে বৃষ্টিপাত বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে আসতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে বৃষ্টি হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে আকাশ জলীয়বাষ্প শূন্য হয়ে যেতে পারে। তখন আবার দেখা যাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।’
এবার আগে আসছে মৌসুমি বায়ু : প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসের তীব্র গরম থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে সুবাতাস হিসেবে আন্দামান সাগর থেকে মিয়ানমার হয়ে টেকনাফ উপকূল দিয়ে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আর তা প্রবেশের পরপরই বাংলাদেশে ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শুরু হয় বর্ষাকাল। এপ্রিল ও মে মাসের গরম থেকেও রক্ষা করে এ বাতাস। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা এ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ও উত্তরের শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শুষ্ক বায়ুর ছোঁয়ায় এসে গলে যায় জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু এবং দেশে বর্ষাকাল শুরু হয়। এবার এই বাতাস আগামী দুদিনের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, এবার অনেক আগেই মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে যাচ্ছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রবেশের কথা থাকলেও তা আগামী দুদিনের মধ্যে প্রবেশ করবে। আর এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামসহ অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত ঝরছে।