প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আবারও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে শিক্ষাবিদরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তাঁদের মতে, এই পরীক্ষা শিক্ষায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে না, বরং বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং শিশুদের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ, যিনি প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রধান, বলেন, “এই বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো সমতা বা গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। অতীতে দেখেছি, স্কুলগুলো শুধুমাত্র ওই শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ দেয় যারা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে সক্ষম, যা বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়।” তিনি আরও বলেন, এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ব্যবস্থা চালু করা উচিত, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করবে।
শিক্ষাবিদরা এই পরীক্ষাকে “অপ্রয়োজনীয়” এবং “বৈষম্য সৃষ্টিকারী” বলে মন্তব্য করেছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীও একই মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, “এই বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নেতিবাচক প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং এতে কোটার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, যা প্রাথমিক শিক্ষায় কোনো ভালো প্রভাব ফেলবে না।”
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সালে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ২০০৯ সালের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো, কিন্তু পরবর্তীতে পিইসি পরীক্ষা চালু হওয়ায় এটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০২২ সালে আকস্মিকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যদিও সে সময়ও বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন।
এবারও, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আবার বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে এগিয়ে যাচ্ছে, যদিও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এই উদ্যোগটি আরও একবার ভুল পথে হাঁটা হতে পারে।