রোজার মাসে ইফতারের সময় খাবারের ওপর অনেকটা নির্ভর করে আমাদের সুস্থতা এবং সারাদিনের ক্লান্তি কাটানো। রোজা রেখে ইফতার করার পর অনেকেই এমন কিছু খাবার খেয়ে ফেলেন যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এবং কোমল পানীয়। এসব খাবার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং সারাদিনের ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা ইফতারের সময় স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেন।বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ দিনে যে পরিমাণ খাবার খাওয়া হয়, রোজায় তা থেকে এক তৃতীয়াংশ কম খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় কী খাবেন, তা বিশেষভাবে সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করা জরুরি, যাতে সারাদিনের রোজা পরবর্তী সময়ে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি প্রদান করা যায়। ইফতারে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করবে এবং শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করবে।
ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবারসমূহ:
পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ: সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা ক্লান্তির একটি প্রধান কারণ। ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় গ্রহণ শরীরের পানির অভাব পূরণে সহায়তা করে। তাজা ফলের রস, লেবুর শরবত, ডাবের পানি, আখের রস এবং গুড়ের শরবত ইফতারে রাখা যেতে পারে। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে ও পুষ্টি জোগাতে সহায়ক।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ইফতারে ডিম, মাছ, মুরগির মাংস বা ডাল রাখা যেতে পারে। ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোলিন এবং টাইরোসিন থাকে, যা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন শরীরের শক্তি বজায় রাখতে এবং মাংসপেশী পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
শাকসবজি ও ফলমূল: শাকসবজি ও ফলমূল ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারের ভালো উৎস, যা শরীরের সেরোটোনিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং মুড ভালো রাখতে পারে। ইফতারে সবুজ শাকসবজি, পাকা আনারস, লাল টমেটো ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। এই খাবারগুলো শরীরের পুষ্টি জোগাতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে।
খেজুর: পুষ্টিকর ফল খেজুর শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক সরবরাহ করে। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে। পুষ্টিবিদরা বলেন, খেজুর নিয়মিত খেলে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। তবে, ডায়াবেটিস থাকলে খেজুরের পরিবর্তে শুকনো খেজুর খাওয়া উচিত।
হালকা ও সুষম খাবার: ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা ভারী খাবার পরিহার করে হালকা ও সুষম খাবার গ্রহণ করা উচিত। চিড়া, কলা, টক দই, ঝোলা গুড় বা মধু ইফতারে রাখা যেতে পারে, যা সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর। এসব খাবার হজমে সহায়ক এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার: বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে প্রয়োজনীয় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা শরীরে কোলেস্টেরল তৈরিতে সাহায্য করে। কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি ইফতারে রাখা যেতে পারে। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাট সরবরাহ করে এবং শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ইফতারের খাবারের নির্বাচন শরীরের সুস্থতা এবং ক্লান্তি দূর করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোজার পর শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি দেওয়ার জন্য সুস্থ ও সুষম খাবার খাওয়া উচিত। পর্যাপ্ত পানি, প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল এবং বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারগুলো শরীরের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে সহায়তা করে এবং রোজার পরবর্তী ক্লান্তি দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।