X

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসুক মধ্যপ্রাচ্যে

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হয় গত ১৩ জুন। ওই দিন ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেদিন জানিয়েছিলেন, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের ওই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মূলে’ আঘাত করা। ইরান খুব শিগগির পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইরান এর জবাবে বলে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তির জন্য।

ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেহরানও ‘ট্রু প্রমিস’ নামের অভিযানে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে। সংঘাত দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে এই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধের সবচেয়ে বিধ্বংসী বোমা বাংকার বাস্টার নিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আঘাত করে। ব্যবহার করা হয় বি-২ বোমারু বিমান। যুদ্ধ বিস্তার লাভ করে। এই সংঘাত চলে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। প্রায় ১২ দিনের এই হামলায় ইসরায়েল ও ইরান দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কে জয়ী হলো, কে পরাজিত, তার চেয়েও বড় কথা, অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ইরানে কয়েক শ আর ইসরায়েলে প্রাণ গেছে অন্তত ৩০-৩৫ জনের। ব্যাপক সম্পদহানি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ঘরবাড়ি-ভবন-পারমাণবিক স্থাপনার অনেক কিছু ধসে পড়েছে। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে, তাতেই বোঝা যায় হামলা-পাল্টা হামলার মাত্রা কতটা ভয়াবহ ছিল।

ইরান-ইসরায়েল যতদিন যুদ্ধ করছিল, ততদিন এই যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ার পর তা আরও বিস্তার লাভ করে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরান প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরান এই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে সে হামলা করতে পারে। তবে কাতারে ইরানের হামলার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ নাটকীয় মোড় নেয়।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ও বাহিনীর ওপর ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনায় বিচলিত ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কথা বলেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইরান এখন এ অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে এগোতে পারে। আমি ইসরায়েলকেও একই পথে চলার জন্য উৎসাহিত করছি।’ তার এই বক্তব্য ছিল আগের দিন দেওয়া একটা পোস্টের একেবারে বিপরীত। আগের দিন তিনি যেখানে ইরানে ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে’র কথা বলেছিলেন, সেখানে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বললেন যুদ্ধবিরতির কথা। এখন খবর আসছে স্বয়ং ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিবিসির ফার্সি সার্ভিসের খবরে জানানো হয়, ট্রাম্প ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। ফলে এটা স্পষ্ট, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

গতকাল সকাল থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা বলেছে। তবে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ইসরায়েল। ইরান তা অস্বীকার করে। এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলকে একটি সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের আর হামলা চালানো উচিত নয়। ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরায়েল। বোমা ফেলো না। যদি তুমি এটা করো, তাহলে এটা হবে একটি বড় লঙ্ঘন। তোমার পাইলটদের বাড়িতে নিয়ে আসো, এখনই!’

বোঝা যায়, যুদ্ধবিরতি এখনো ঝুঁকির মধ্যে আছে। পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তবে এই যুদ্ধকে ঘিরে উত্তেজনার যে পারদ ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তা এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দূতিয়ালি করায় যুদ্ধবিরতি খুব দ্রুতই কার্যকর হবে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আধুনিক বিশ্বের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভীষণ তিক্ত ও আত্মধ্বংসী।
ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারত। ইতোমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় তেলের দাম একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তেলসংকট সারা বিশ্বেই অভাবনীয় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারত। এর অভিঘাত এসে পৌঁছাত দেশে-মহাদেশে।

আমাদের মতো দেশগুলো, যারা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভরশীল, বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল সবচেয়ে বেশি। আপাতত যুদ্ধবিরতি সেই শঙ্কা দূর করেছে। ইসরায়েল ও ইরানের কোটি কোটি মানুষ, যাদের অধিকাংশই নিরীহ ও শান্তিপ্রিয়, এ কদিন অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছেন। যুদ্ধবিরতিতে তাদের মধ্যেও ফিরে আসবে স্বস্তি। এ জন্য ইসরায়েলকে তার আগ্রাসী ভূমিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। আরব অঞ্চলে সব রাষ্ট্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমদৃষ্টি নিয়ে যৌক্তিক আচরণ করাও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের পূর্বশর্ত বলে আমরা মনে করি। স্থায়ী হোক এই যুদ্ধবিরতি। পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসুক মধ্যপ্রাচ্যে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings