X

ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি গুরুত্ব দেয়

মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকেই সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন আর তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন।’ সুরা নিসা আয়াত-১।

এক মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এ বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখার শিক্ষা দেয় ইসলাম। এ শিক্ষার কারণে একজন মুসলমান অন্য মুসলমানকে আপন ভাইয়ের মতো দেখার তাগিদ অনুভব করে। আল্লাহ-প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের যে শিক্ষা দিয়েছে তা মানব জাতির শান্তি এবং কল্যাণের সহায়ক। ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনা আল্লাহমুখী হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। জাতি গোত্র ও ভাষার পার্থক্যকে এড়িয়ে ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে লোকসকল! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি।’ সুরা হুজুরাত আয়াত-১৩। সব মুসলিম ভাই ভাই- এ চিন্তা ও চেতনা মুসলমানের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ এবং তার প্রিয় রসুল হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধকে প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং ভ্রাতৃগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন কর আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ সুরা হুজুরাত আয়াত-১০।

ঐক্যবদ্ধতা সমাজ ও দেশের জন্য আশীর্বাদ বলে বিবেচিত হয়। মহান আল্লাহ আল কোরআনে মুমিনদের ঐক্যের ওপর গুরুত্বরোপ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেছেন ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেছো।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৩।

মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের মনোভাব কখনো পরিত্যাগ করা যাবে না। মুসলমান ভাইয়ের দোষত্রুটি থাকলেও তাকে পরিত্যাগ করা ঠিক হবে না। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভাইকে অবশ্যই সাহায্য করবে সে জালিম হোক কিংবা মজলুম। অত্যাচারী কিংবা অত্যাচারিত। এক ব্যক্তি বলল ইয়া রসুলুল্লাহ! সে মজলুম হলে আমি তাকে সাহায্য করব তা তো বুঝলাম কিন্তু সে জালিম হলে আমি তাকে কীভাবে সাহায্য করব? জবাবে তিনি বললেন, সে ক্ষেত্রে তুমি তাকে জুলুম করা থেকে নিবৃত্ত রাখবে এটিই তার প্রতি তোমার সাহায্য।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘একজন মানুষ নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্য তা যতক্ষণ পছন্দ না করবে সে ইমানদারই হবে না।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিনের ওপর অন্য মুমিনের ছয়টি দাবি রয়েছে। অসুস্থ হলে দেখতে যাবে, মারা গেলে জানাজায় উপস্থিত হবে, ডাকলে সাড়া দেবে, দেখা হলে সালাম দেবে, হাঁচি দিলে জবাব দেবে, উপস্থিত থাকুক কিংবা অনুপস্থিত সব সময় তার কল্যাণ কামনা করবে।’ মিশকাত। হাদিসে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি এক দিন তার একজন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পথে বের হলো। ওই ভাই ভিন্ন গ্রামে, এ সময় মহান আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠালে মানুষের আকৃতি দিয়ে ফেরেশতা তাকে বলল আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সে বলল ওই গ্রামে যাচ্ছি আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। ফেরেশতা বলল, তার সঙ্গে কি আপনার কোনো দেনা-পাওনা আছে যার তথ্য জানার জন্য যাচ্ছেন? সে বলল, তা নয় বরং আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। এরপর ফেরেশতা বলল আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সুসংবাদ জানানোর জন্য এসেছি যে, আপনি যেমন আল্লাহর ওয়াস্তে ওই সম্পর্ক চলমান রেখেছেন মহান আল্লাহও তেমন আপনার সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্ক চলমান রেখেছেন।’ মুসলিম, মিশকাত।

ইসলাম অন্য মুসলমান সম্পর্কে অনর্থক সন্দেহ করা এবং কু-ধারণা পোষণ থেকে দূরে থাকার তাগিদ দিয়েছে। কারণ অকারণ সন্দেহ ও কু-ধারণা বিভেদের বীজ বপন করে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সন্দেহ পোষণ করা থেকে নিজেদের রক্ষা করো, সন্দেহ পোষণ বেশির ভাগ মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। তোমরা পরস্পর ছিদ্রান্বেষণ করবে না, অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না, দালালি করবে না, হিংসা পোষণ করবে না, ঘৃণা পোষণ করবে না এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করবে না বরং আল্লাহর বান্দারূপে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

Categories: ধর্ম
Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings