X

উপকারী যজ্ঞডুমুর

‘আগামী দিনের জন্যে, আমাদের সন্তান সন্ততিদের জন্যে

একটিও ডুমুর ফুলের উত্তরাধিকার

আমরা কি রেখে যেতে পারব?

তারা কি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারবে

যজ্ঞডুমুর

কাউকে অনেক দিন না দেখলে আমরা বলি ডুমুরের ফুল হয়ে গেলে নাকি। আসলে ডুমুরের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল হাইপেনথোডিয়াম নামের বিশেষ পুষ্পমঞ্জরিতে উৎপন্ন হয়। এর পুষ্পধারকটি স্ফীত, গোলাকার ও ফাঁপা হয়। এ জন্য ফুলকে বাইরে থেকে দেখা যায় না। অতি ছোট ছোট কীটপতঙ্গ এবং ডুমুর বোলতা নামের ছোট ছোট মাছি সেই ফলের মধ্যে ঢুকে পরাগায়ন ঘটায়। নিষেকের পর শল্কের মতো মঞ্জরিপত্র দ্বারা আবৃত পুষ্পমঞ্জরিটি ফলে পরিণত হয়।

ময়মনসিংহ শহরের কাচিঝুলি মোড় থেকে যে সড়কটি চলে গেছে উত্তর দিকে ব্রহ্মপুত্র তীর বা জয়নুল সংগ্রহশালার দিকে, সে সড়ক ধরে একটু এগিয়ে গেলে বাঁ পাশে চোখে পড়বে একটি যজ্ঞডুমুরগাছ। গায়ে কাঁচা ও পাকা ফল। কাঁচা ফলের রং সবুজ আর পাকা ফলের রং লালচে বা কমলা। এ ছাড়া টাউন হল মোড়ের ব্যায়ামাগারের পশ্চিম পাশে একটি যজ্ঞডুমুরের গাছ রয়েছে। পাবনা শহরের শালগাড়িয়াতেও একটি গাছ দেখেছি।

যজ্ঞডুমুর শাখা–প্রশাখাময়, চিরসবুজ, বড় আকারের বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ficus racemosa, এটি মোরাসেই পরিবারভুক্ত। কাণ্ডের গায়ে গুচ্ছাকারে ফল ধরে, তাই ইংরেজিতে ক্লাস্টার ফিগ নামে পরিচিত।

বাংলায় এর আরেক নাম জগডুমুর। সংস্কৃতে উদুমবারা, হিন্দিতে গুলার, উর্দুতে ডিমিরি নামে পরিচিত। পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলগুলোর একটি যজ্ঞডুমুর। মিসরে পাওয়া গেছে ডুমুরের ফসিল।

হরিয়াল, ঘুঘু ইত্যাদি পাখি এবং কাঠবিড়ালি, বাদুড়, বানর ইত্যাদি প্রাণীর কাছে যজ্ঞডুমুরের পাকা ফল খুব প্রিয়। পাখিরা এই ফল খায়, বীজ পেটের মধ্যে জারিত হয়। পাখিরা দূরে গিয়ে মলত্যাগ করলে মলের সঙ্গে বীজ মাটিতে পড়লে সেখানে নতুন চারা গজায়। এভাবেই এই গাছ টিকে আছে। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।

গাছটি ২৫ থেকে ৩০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। পাতাগুলো আকৃতিতে অনেকটা লম্বাটে ও সুচালো। পাতা বড়, ডিম্বাকৃতির ও মসৃণ। অন্য ডুমুরের মতো খসখসে নয়। এদের বাকল পুরু। বসন্তের শুরুতে ফুল আসে এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকে ফল পাকতে শুরু করে। ফলের ভেতর পিঁপড়া বা ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ প্রবেশ করে বাসা বানায়। এরা পরাগায়নে সহায়তা করে। যজ্ঞডুমুরের ফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। বেদানার চেয়ে ডুমুরের ফলে বেশি আয়রন থাকে। তাই ডুমুরের ফল খেলে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে অ্যানিমিয়া দূর করে।

হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাচীনকাল থেকেই এই গাছের উল্লেখ রয়েছে। এই গাছ ছাড়া দুর্গাপূজা হতো না, কারণ যজ্ঞে এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। তাই থেকে গাছের নাম যজ্ঞডুমুর।

আয়ুর্বেদে এই গাছের প্রতিটি অংশের বহুল ব্যবহার আছে। এই গাছের ছাল বেটে পেস্ট বানিয়ে মশা বা পোকামাকড় কামড়ানোর জায়গায় লাগালে আরাম পাওয়া যায়। ডায়রিয়ার ওষুধ হিসেবে এর ফল ব্যবহার করা হয়। পাতার গুঁড়া দিয়ে আলসারের ওষুধ তৈরি করা যায়। মূল ব্যবহৃত হয় ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে। অর্শ ও কুষ্ঠ রোগের ওষুধ তৈরিতে আয়ুর্বেদে এর ব্যবহার আছে।

ডুমুরের ফল উন্নত মানের সবজি। এর ভাজি বা ভর্তা খুব উপাদেয়। অন্য সবজির সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়। বাজারের অনেক কেনা মিক্সড আচারের মধ্যে ডুমুর দেওয়া থাকে।

বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, সিলেটের মৌলভীবাজার ও টাঙ্গাইলে ডুমুর বেশি জন্মায়।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings