X

ঋণ পরিশোধে চাপে সরকার

দেশের রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে আশা-জাগানিয়া সাফল্য আসেনি। অর্থবছরের ১০ মাসে যে ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে, তা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার কম। ঋণ ছাড়ও হয়েছে আগের অর্থবছরের চেয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি কম। তবে পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ৭০ কোটি ডলার।
যার ফলে ঋণের বড় অংশই পরিশোধে চলে যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইআরডির তথ্য বলছে, এপ্রিল শেষে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ৭৬০ কোটি ডলারের বেশি।
অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৩৩৫ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি অর্থের অন্যতম উৎস উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণে ভাটা পড়েছে। ঋণ প্রতিশ্রুতিও কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাগুলো। তবে ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ কর্মসূচি থেকে।
বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১৭৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি এসেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে। জাইকা ১০ মাসে ৮৩ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে। এ অর্থবছর ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে।
ঋণ প্রতিশ্রুতি কমার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি মুদ্রা আসার অন্যতম উৎস প্রকল্পে অর্থছাড়ও কমেছে।

এপ্রিল শেষে অর্থ ছাড় হয়েছে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ছাড় করেছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বছরের ব্যবধানে এ অর্থছাড়ের হার কমেছে ১৪.১১২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ উন্নয়ন সহযোগীটি অর্থ ছাড় করেছে ১৪০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক অর্থ ছাড় করেছে ১১৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি। আর ৯০ কোটি ডলার দিয়েছে জাইকা।

বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা আগে যেসব ঋণ দিয়েছিল, সেসব ঋণ পরিশোধের চাপ এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে। এপ্রিল শেষে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৫০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৪২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময় বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ২৮১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমেই বড় হয়েছে সরকারের ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। এমনকি এ ব্যয় এবার রাজস্ব আহরণকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

চলতি অর্থবছর বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। আমেরিকা ও জাপানের কাছ থেকে ২.২ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার ও এডিবির কাছ থেকে ১.৭৯ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এডিবির ২৭৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের রয়েছে ২০৮ কোটি ডলার এবং আমেরিকা ও জাপানের যৌথভাবে রয়েছে ২০৪ কোটি ডলারের বেশি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ঋণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে পরিশোধও বাড়ছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা রাজস্ব আদায় যদি বাড়াতে না পারি এবং বৈদেশিক মুদ্রার জোগানও যদি না বাড়ে, তাহলে ঋণ পরিশোধের চাপে অর্থনীতিতে দুর্দশা নেমে আসতে পারে।’

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings