X

এক কেকেই বাজিমাত

২০১৯ সালে স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হলে অসুস্থ স্বামী, দুই ছেলে এবং শাশুড়ির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলেন এখনকার ‘ড্রিমস কিচেন’-এর স্বত্বাধিকারী ফারহানা আফরোজ লাবনী।

রাজশাহী নগরীর জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী রিনি’স কিচেনের স্বত্বাধিকারী সোনিয়া খানের সহযোগিতায় দুইদিনের একটি মেলায় অংশ নেন ফারহানা আফরোজ। কেক, চিকেন ললিপপ, ডিমসুন্দরি পিঠা, জামাই পিঠা, মালাইচপসহ নানা ধরনের খাবার নিজ হাতে তৈরি করে হাজির হন মেলায়। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর ফারহানা আফরোজ যখন স্বামী, সংসার এবং বাচ্চাদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, সেসময় তাকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন কাজিন তানিয়া রহমান। মেলায় অংশ নেওয়ার প্রথম দিনই চার হাজার টাকার খাবার বিক্রি করেন তিনি। উৎসাহ নিয়ে আরও নতুন কিছু খাবার যুক্ত করেন দ্বিতীয় দিন। সেদিন বিক্রি হলো ৭ হাজার টাকার খাবার। এভাবেই হোমমেইড খাবার নিয়ে ফারহানা আফরোজের পথচলা শুরু।২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর ‘আমরা রাজশাহীর উদ্যোক্তা’ গ্রুপের মিলনমেলা উপলক্ষে ২০ পাউন্ডের একটি কেক অর্ডার আসে ফারহানা আফরোজের কাছে। কেকটি ডেলিভারির মাধ্যমে মোড় ঘুরে যায় তার উদ্যোগের। কেকের অসাধারণ স্বাদের জন্য সকলের মন জয় করে নেন তিনি। পরপর অনেক অর্ডার আসতে থাকে ওই গ্রুপ থেকে। গ্রুপটির এডমিন মাসুদ রানা এবং মিজানুর রহমানের সাথে তার তৈরি আরেকটি কেক নিয়ে আল-আকসা ডেভেলপার লিঃ এর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান কাজীর বিবাহ বার্ষিকীতে অংশ নেন ফারহানা আফরোজ। সেখানেও বাজিমাত, বাসার সকলে কেকের স্বাদে এতো মুগ্ধ যে তারপর থেকে মিজানুর রহমান কাজী অফিসিয়াল বা পারিবারিক সব প্রোগ্রামে মাসে ১০ থেকে ১২ টি কেক নেন ‘ড্রিমস কিচেন’ থেকে।

ছোটবেলায় রান্নার প্রোগ্রাম দেখে খাতায় রেসিপি লিখে বাসায় তৈরি করাই ছিল উদ্যোক্তার আগের অভিজ্ঞতা। এখন সকলের সাড়া দেখে তিনি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রিনি’স কিচেন এবং বিসমিল্লাহ কুকিং হাউস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে ফুড এবং বেভারেজ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।ড্রিমস কিচেনের আইটেমগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “বিভিন্ন ধরনের কেক, কুনাফা, ফুচকা, নবাবি সেমাই, বিরিয়ানি, পিঠা, পেটিস, চিকেন বানসহ নানা ধরনের খাবার রয়েছে আমার ড্রিমস কিচেনে। এখানে স্পেশাল একটি খাবার রয়েছে চানাচাট যা সচরাচর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এছাড়া আমার পেজে হলুদ, মরিচের গুঁড়া, ঝালমুড়ির মশলাও যুক্ত করেছি। হলুদ মরিচ সংগ্রহের পর আমার শাশুড়ি এগুলো শুকিয়ে, ভাঙিয়ে আনেন। পরে আমি এগুলো পরিশোধন করে বয়ামজাত করি। ‘ড্রিমস কিচেন’-এর সব কাজ আমি এবং আমার শাশুড়ি মিলে করে থাকি।”

”আলহামদুলিল্লাহ, রাজশাহী শহরের মধ্যে এবং আশেপাশেও আমার খাবার যাচ্ছে। ঢাকা থেকেও আমার কেক অর্ডার করেছিলেন এক আপু, ঢাকাতেও আমি কেক পাঠিয়েছি। এছাড়া হোমমেইড ফুড নিয়ে কাজ করে এমন উদ্যোক্তারাও আমার গুঁড়া মশলা নিয়ে থাকেন,” বলে জানান ফারহানা আফরোজ।সাধারণ গৃহবধূ থেকে আজকে উদ্যমী এই উদ্যোক্তা বলেন, “আমি আমার সন্তান এবং শাশুড়িকে নিয়ে দেশে থাকতাম। আমার বর সৌদি আরবে থাকতেন। সেখান থেকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন। সন্তানদের নিয়ে আমার ভালোই দিন কাটতো। বর মাঝে মাঝে আসতেন দেশে। হঠাৎ একদিন সৌদি আরব থেকে ফোনে জানানো হয়, আমার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে। সেখানে ছয়দিন কোমাতে ছিলেন তিনি। আমি দেশ থেকে এগুলো শুনেই যাচ্ছি, কিন্তু যাওয়ার তো কোন উপায় নেই। সেখান থেকে তাকে ২৭ রমজান দেশে আনা হয়। তারপর থেকে তিনি অসুস্থ, উনাকে খাওয়ানো, গোসল করানো সব করে দিতে হতো। আল্লাহর রহমতে তিনি এখন টুকটাক হাঁটাচলা করতে পারেন। আমাদের যা সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে কিছুদিন চলে যেতো, কিন্তু স্বামীর চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া, সংসার খরচ এগুলো চিন্তা করে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। উদ্যোক্তা জীবনে পদার্পণের পর আমার চিন্তা অনেকটা লাঘব হয়েছে।”

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings