X

কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের রেকর্ড

প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায়ে সিগারেট, মদ, পোশাকের শো-রুম, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান টিকেট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ড্রিংসসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে ওইসব পণ্য বা সেবায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা।

মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পরিপালনে কিছু কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো এবং যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপদেষ্টাদের সভায় এনবিআরের দেওয়া প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে, যা অনুমোদন হয়েছে বলে জানা গেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে আগামী ৪-৫ জানুয়ারি আদেশ জারি করা হতে পারে বলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, আইএমএফ-এর শর্ত পূরণে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট খাতে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূলত আইএমএফ অর্থ বিভাগকে শর্ত দিয়েছে। এনবিআর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

আইএমএফ এর শর্তানুযায়ী, ভ্যাট খাতে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়তি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করতে হবে। আমরা কয়েকটি খাতে ভ্যাট বাড়ানো, কোথাও হ্রাস এবং কোথাও কোথাও যৌক্তিকীকরণের পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রতিবেদন তৈরি করেছি। অর্থ উপদেষ্টাদের বৈঠকে প্রস্তাব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে ৪-৫ জানুয়ারি আদেশ জারি হতে পারে।

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যে বা সাধারণ মানুষের প্রভাব পড়ে এমন কোনো পণ্য বা সেবায় ভ্যাট বা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। বরং বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বাজেটের পর বেশ কয়েকবার ভ্যাট ও শুল্ক কমানো হয়েছে।

কোন খাতে কত রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা 

এনবিআরের প্রস্তাব অনুসারে, সিগারেট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বাড়তি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা সিগারেট রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত।

চলতি অর্থবছর সিগারেটের দাম ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে অর্থবছরের বাকি ছয়মাসে দাম ও শুল্ক আরো বাড়ানো হচ্ছে।

এনবিআর বলছে, ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সিগারেট খাতে দাম ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।

প্রতিবেদন বলছে, সম্পূরক শুল্ক দেড় শতাংশ হারে বাড়ানো হচ্ছে। দাম নিম্নস্তরে ৫ টাকা ও উচ্চ, মধ্যম ও প্রিমিয়াম স্তরে ১০ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হচ্ছে। এতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ শলাকার প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের দাম ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা ও মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হচ্ছে। তিনটি স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হচ্ছে।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ছয়মাসে সিগারেট খাত থেকে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।

অন্যদিকে চলতি বছর ব্যাংক খাতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়। কিন্তু বিমান টিকিটে গত কয়েক বছর ধরে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। ব্যাংক খাতে আর্থিক নিরাপত্তা ও বাধ্য হয়ে মানুষ টাকা রাখে। তার উপর প্রায় সব হিসাবধারীকে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে নয়—কখনো কাজে, আবার কখনো ভ্রমণের জন্য যান। এসব বিবেচনায় বিমান টিকেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য এনবিআরের প্রতিবেদনে ‘দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৪’ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ রুট ও সার্কভুক্ত দেশের বিমান টিকেটে ৫০০ টাকা হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এটা যৌক্তিকীকরণ করা প্রয়োজন। সেজন্য অভ্যন্তরীণ রুটে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হচ্ছে। আবগারি শুল্ক বাড়ার ফলে টিকেটের দাম বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছয়মাসে বিমান টিকেট থেকে বাড়তি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে। বিমান টিকেটে দীর্ঘদিন আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের টিকেটে আবগারি শুল্কের কিছুটা বৈষম্য ছিল। যা দূর করতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি এনবিআর হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে। সেটার ধারাবাহিকতা থাকতে পারে।

এনবিআর সূত্র বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও বেশ কিছু পণ্যে অব্যাহতি রয়েছে।

আইএমএফ বলছে, অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বের হয়ে আসছে হবে। সে জন্য চলতি অর্থবছর বেশ কিছু পণ্যে অব্যাহতি তুলে দেওয়া হয়েছে বা যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে।

সেজন্য ৪২টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। যেমন—হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও পোশাক ব্র্যান্ডের শো-রুমে ভ্যাট ৫ ও ৭ শতাংশ রয়েছে। আবার নন-এসি হোটেলের ভ্যাট সাড়ে সাত শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর স্থানীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর বর্তমানে সাড়ে সাত শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। শুধু ব্র্যান্ডেড নয়, সাধারণ মানের যে কোনো পোশাক কিনলেই ক্রেতাদের একই হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতে পারে।

মেডিসিন ব্যবসায়ও ভ্যাট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ড্রিংকস যেমন জুস জাতীয় পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এইচআর থেকে সিআর কয়েলের ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া, যে-সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট কার্যকর আছে, সেটি সাড়ে সাত শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে।

শুধু স্থানীয় পণ্য নয়, আমদানি করা সাতটি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে—সুপারি, সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, আর্টিফিশিয়াল টোব্যাকো। এছাড়া মদের বারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। আবার আঁচার ও ছাটনি থেকে শুরু করে বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ হয়েছে।

এনবিআরের প্রতিবেদন বলছে, মূসক আইনের দুটি ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন—ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বিক্রি ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বিক্রি ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত হলে তার জন্য ৪ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। তবে টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা ছাড়ালেই এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। বর্তমানে বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হয় না।

এছাড়া তাদের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (বিআইএন) নিতেও বাধ্য করা হয়নি। তবে, নতুন নিয়মে বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি টার্নওভার হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বিআইএন নিতে হবে। এর ফলে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে—দুটোই বাড়বে বলে মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

এনবিআর বলছে, সাধারণত বাজেটে কোনো পণ্যের ভ্যাট, আবগারি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, কমানো বা যৌক্তিকীকরণ করা হয়। কিন্তু এবার বাজেটের ছয় মাস বাকি থাকতে কিছু পণ্যের ভ্যাট, আবগারি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, কমানো বা যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে। ফলে এসব পণ্য থেকে বাড়তি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings