X

“কবে শেষ হবে তোর পড়াশোনা?” কারণ পড়াশোনা শেষ হলেই চাকরির ব্যবস্থা হবে

পরপর দুই কন্যাসন্তানের পর বাবা মনে প্রাণে চেয়েছিলেন একটা ছেলে হোক। তাই তৃতীয় মেয়ে হিসেবে তিনি যখন জন্ম নিলেন, তখন আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছিল।বাবার এরকম চাওয়ার কারণ ভবিষ্যৎ চিন্তা। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী বাবার কাছে তার অনুপস্থিতিতে সংসারের হাল ধরতে পারা একটা মানুষের যে কতোটা প্রয়োজন তা নাদিয়া পারভীন জুথী হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন সেদিন, যেদিন তার বাবার ২৫ বছরের কর্মপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।সেদিন প্রচলিত সমাজ চোখে আঙুল দিয়ে বুঝাতে চেয়েছিল এই সমাজে একটা কর্মক্ষম ছেলে প্রতিটি সংসারে কতোটা প্রয়োজন।কিন্তু নাদিয়ারা তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। বাবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিন থেকে তারা তিন বোন কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন। কিন্তু এটাও বুঝলেন যে এই সমাজে সকল প্রতিযোগিতায় একটা ছেলেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে যতোটা পথ পেরোতে হয়, একটা মেয়েকে পেরোতে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি।।চলার পথে তাকে বারবার পেছনে টেনে ধরে সমাজ, সংসার, কটু কথা, লোকে কী বলবে এসমস্ত আরো নানা প্রতিবন্ধকতা। তাই তাদের জন্য মেয়ে থেকে বাবার ছেলে হয়ে ওঠার যুদ্ধটা সহজ ছিল না মোটেই।উদ্যোক্তা নাদিয়া স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন। ক্লাস সিক্সের পর থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা তার পরবর্তীতে তিনি হাত খরচ অথবা পড়াশোনা, বাবার কাছ থেকে নেননি। ভালো ছাত্রী হওয়ার সুবাদে সেই ক্লাস সিক্স থেকেই স্কলারশিপ, টিউশনি আর টিচারদের অপরিসীম সাপোর্টে মোটামুটি নিজের লেখাপড়া চালিয়ে ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচটাও চালিয়ে নিয়েছেন যাতে তার বাবার উপর চাপ কিছুটা কমে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মোটামুটি সাইকেল চালিয়েই যাতায়াত করতেন।আশেপাশের অনেক মানুষই এটাকে ওভার স্মার্টনেস ভাবতেন। কিন্তু তিনি জানতেন প্রতিদিনের বাস ভাড়াটা তো বেঁচে যায়।উদ্যোক্তা আর্কিটেকচারে পড়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত তার নিজের কম্পিউটার ছিল না। তাই প্রায়ই সন্ধ্যা পর্যন্ত ভার্সিটির কম্পিউটার ল্যাবে ডিজাইনের কাজ করতেন, আর ছুটির দিনে বান্ধবীদের বাসায়। তার জীবনের প্রথম কম্পিউটার এবং তার পরে প্রথম ল্যাপটপ তিনি নিজের টাকাতেই কিনেছিলেন এবং স্টুডেন্ট অবস্থাতেই। এজন্য তার হয়তো খুব শখের কোন ড্রেস বা কসমেটিকস কেনার সুযোগ হয়নি।

 

উদ্যোক্তা নাদিয়ার পড়াশোনা শেষ করাটা তার মা দেখে যেতে পারেননি। তার ফাইনাল থিসিস জুরির ২৬ দিন আগে মা মারা যান।সবাই ভেবেছিলেন, তার জুরি দেয়া আর হবে না। অন্তত একটা সেমিস্টার ব্রেক তো যাবেই। কিন্তু মা মারা যাওয়ার চারদিন পর থেকে তিনি ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করলেন এবং তার ২৬ দিন পর থিসিস জুরিও দিলেন। তার কানে সবসময় মা’র সেই কথাটা বাজছিলো-

“কবে শেষ হবে তোর পড়াশোনা?”

মা প্রায়ই এই প্রশ্নটা করতেন।কারণ পড়াশোনা শেষ করলেই তার একটা চাকরির ব্যবস্হা হবে।উদ্যোক্তার মা বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি দেখে যেতে পারতেন তার সেই মেয়েটি আজ বাংলাদেশের স্বনামধন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণিত বিভাগে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।অন্যদিকে নিজের সংসার, সন্তান সামলেও তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের আত্মপরিচিতি।আজ প্রায় ১৮০ জন তাঁতি এবং ৩৬ হাজার সদস্য নিয়ে চলছে তার উদ্যোগ Anabia।একশ ৮০টি তাঁত সম্পূর্ণ নিজস্বভাবে কাজ করছে শুধুমাত্র ‘আনাবিয়া’র জামদানি তৈরির জন্য। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ৩৬টি দেশে পৌঁছে গেছে ‘আনাবিয়া’র জামদানি।লকডাউন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তারা প্রায় ৬০টি তাঁতি পরিবারকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, একটি তাঁতও যেন বন্ধ না থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।আজ তার মা বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি সবচেয়ে খুশি হতেন। দেখতে পেতেন তার ছেলে হয়ে জন্মাতে না পারা মেয়েটা শুধু একটা পরিবার না, অসংখ্য পরিবারের হাল ধরেছে।নাদিয়া পরিবারের সবার সাপোর্ট পেয়েছেন এবং সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করে যাচ্ছেন তার স্বামী।তরুণদের জন্য উদ্যোক্তার পরামর্শ হলো, ছেলে কিংবা মেয়ে না– যদি কেউ যোগ্য সন্তান হয় তাহলে যে কেউই পরিবার ও সমাজকে বদলে দিতে পারে। তাই কী নেই না ভেবে যা আছে তাই নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings