ভ্রমণের জন্য কুমিল্লা জেলা একটি চমৎকার গন্তব্য। প্রাচীন ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, বৌদ্ধ বিহার, ঐতিহাসিক মসজিদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই জেলা। ময়নামতি, শালবন বিহার ও লালমাই পাহাড় ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়। অন্যদিকে ধর্মসাগর ও পার্কগুলো পরিবারসহ সময় কাটানোর জন্য উপযোগী। শহরের খাবার, বিশেষ করে কুমিল্লার রসমালাই পর্যটকদের মন জয় করে। ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজে যাওয়া যায়। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে কুমিল্লা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। আসুন জেনে নেই কুমিল্লা জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
১. ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এটি বাংলার প্রাচীনতম বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন বহন করে।
২. ধর্মপুর বাজার ও ঘাট
স্থানীয় নদীকেন্দ্রিক বাজার, প্রাচীন নৌ-বাণিজ্যের স্মৃতিবহ।
৩. ময়নামতি জাদুঘর
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রাপ্ত মূর্তি, মুদ্রা, কঙ্কালসহ অনেক দুর্লভ নিদর্শন রয়েছে এখানে।
৪. ওয়ান্স আপ অন এ টাইম পার্ক
পর্যটন ও বিনোদনের জন্য একটি আধুনিক থিম পার্ক। শিশুদের জন্য রাইড, বোটিং ও বিভিন্ন মডেল স্থাপনা রয়েছে।
৫. ধর্মসাগর দিঘি
মহারাজা ধর্মমাণিক্য কর্তৃক খননকৃত বিশাল দীঘি। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যার চারপাশে হাঁটার পথ এবং বসার জায়গা রয়েছে।
৬. রানীর কুঠি
ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য রানীদের বাসভবন ছিল এটি। এখনও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে আকর্ষণীয়।
৭. বিজয়পুর মৃৎশিল্প গ্রাম
এখানে বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্প তৈরি হয়। মাটির তৈরি মনোহর জিনিসপত্র পর্যটকদের মন কাড়ে।
৮. লালমাই পাহাড়
প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এটি ময়নামতির সঙ্গে সংযুক্ত এবং বন্যপ্রাণী ও গাছপালার আধার।
৯. ইটাখোলা মুড়া
বৌদ্ধ স্থাপত্যের আরেকটি নিদর্শন। এটি একটি উঁচু টিলায় অবস্থিত মন্দিরসদৃশ স্থাপনা।
১০. কোটবাড়ি এলাকায় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
পর্যটন ছাড়াও শিক্ষামূলক ঘুরতে যাওয়ার জায়গা। নানা রকম ফসল ও কৃষিপদ্ধতি দেখা যায়।
১১. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
১২. মতির মসজিদ (বরুড়া)
প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো, অনন্য মাটির নকশা ও নির্মাণশৈলী বহন করে।
১৩. নবাব বাড়ি (চান্দিনা)
ঐতিহাসিক নবাবদের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত, প্রাচীন স্থাপত্য দর্শনীয়।
১৪. বড় কাটারা মসজিদ
মুঘল আমলের ঐতিহাসিক মসজিদ, কুমিল্লা শহরের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৫. বড় কবরস্থান
ঐতিহাসিক ইসলামি সমাধিক্ষেত্র, বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও ব্যক্তিত্বদের কবর রয়েছে এখানে।
১৬. সোনারগাঁও বাজার (মেঘনা সংলগ্ন)
প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে এখনও ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প পাওয়া যায়।
১৭. চিওড়া শাহী মসজিদ
ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, ১৭শ শতকে নির্মিত। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য বহন করে।
১৮. শ্রীকাইল চা বাগান
অল্প বিস্তৃত হলেও এটি কুমিল্লার একমাত্র চা বাগান হিসেবে পরিচিত, সবুজ প্রকৃতি ঘেরা।
১৯. নবীনগর নদী পার্ক
বিকল্প বিনোদনের জন্য জনপ্রিয়, নৌকা ভ্রমণ ও সন্ধ্যাকালীন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
২০. শালবন বিহার
৮ম-৯ম শতকের বৌদ্ধ বিহার, যেখানে একসময় সহস্রাধিক সন্ন্যাসী বসবাস করতেন। মঠাকৃতির অবকাঠামোটি ঘুরে দেখা যায়।
২১. জগন্নাথ ধাম (চৌদ্দগ্রাম)
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান, বার্ষিক উৎসবের সময় বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
২২. কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
২৩. চান্দিনা রেলওয়ে স্টেশন
প্রাচীনতম রেল সংযোগগুলোর একটি, ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক গুরুত্ব রয়েছে।
২৪. আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্মৃতি কেন্দ্র
বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট গবেষক ও সংগ্রাহকের স্মরণে গড়ে উঠা কেন্দ্র।
২৫. দেবিদ্বার জমিদার বাড়ি
পুরাতন জমিদারি প্রাসাদ, আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।
ভ্রমণের সময় নিচের সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা উচিত —
• প্রচণ্ড গরম ও রোদ থেকে বাঁচতে হালকা পোশাক, ছাতা ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
• ঐতিহাসিক স্থানে চলাফেরায় সচেতন থাকুন। প্রাচীন স্থাপনায় না চড়ুন বা ক্ষতি করবেন না।
• স্থানীয় রীতিনীতি ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখান। মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে শালীনতা বজায় রাখুন।
• স্থানীয় খাবার খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। পরিষ্কার ও ভেজালমুক্ত কিনা যাচাই করুন।
• ভিড়পূর্ণ স্থানে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন। চুরি প্রতিরোধে সতর্ক থাকুন।
• নদী, দীঘি বা পাহাড়ে ঘোরার সময় সাবধান থাকুন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে অনুসরণ করুন।
• স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন। অপরিচিত এলাকা ভালোভাবে ঘুরতে সহজ হবে।