X

কৃষ্ণচূড়ায় মেতেছে ফরিদপুরের প্রকৃতি

কবিতা হয়ে ফুটে থাকে পাতার ফাঁকে লাল রং, স্মৃতির ঘ্রাণে ভরে ওঠে শহরের প্রতিটি মোড়। গ্রীষ্মের খরতাপেও ছায়ার আশ্রয়, নাম তার—কৃষ্ণচূড়া।

কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য ফরিদপুরবাসীর কেবল চাক্ষুষ আরাম নয়, এটি তাদের মনের ভিতরেও শান্তির ছায়া হয়ে ঠাঁই নিয়েছে। রাস্তা, কলেজ চত্বর বা হাসপাতালের পাশে কৃষ্ণচূড়া যেন বলে—আমি ছায়া দিই, তুমি শিখো ভালোবাসা দিতে। এই শহর, এই গাছ আর এই মানুষ—সব মিলেই গ্রীষ্মের ফরিদপুর যেন প্রকৃতির রঙে রাঙানো এক কবিতা।

গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়, ফরিদপুর এখন যেন প্রকৃতির এক কাব্যিক চিত্রশালা। শহরের আনাচে-কানাচে, ব্যস্ত সড়কপথ আর নিরিবিলি ক্যাম্পাসজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুলের সৌন্দর্যে রঙিন হয়ে উঠেছে জনজীবন। ঢাকা-খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সংলগ্ন এলাকা, কিংবা শহরের ভেতরের আলিপুর, টেপাখোলা, কমলাপুর, মেডিকেল কলেজ চত্বরসহ রাজবাড়ী রাস্তার মোড় সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী রাস্তার দুই ধারে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন পথচারীদের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।

বোটানিক্যাল তথ্যমতে, কৃষ্ণচূড়া মূলত মাদাগাস্কার থেকে আগত, তবে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এটি এতটাই মিশে গেছে যে এখন এটি বাংলার এক আবেগে পরিণত হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—রক্তিম ফুল আর কোমল ছায়া। বসন্ত-গ্রীষ্মে এর নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে যেকোনো পথচারী হারিয়ে যান স্মৃতির জগতে।

ফরিদপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী রুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘স্কুল শেষে বন্ধুদের নিয়ে রাজেন্দ্র কলেজের কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে যাই। সেখানে ছবি তুলি, কবিতা পড়ি। এই ফুলের লাল রং যেন মনকেও লাল করে দেয়।’

নিউমার্কেট এলাকার প্রবীণ রিকশাচালক শাহীন মিয়া চোখের কোণ মুছতে মুছতে বললেন, ‘৩০ বছর ধইরা এই শহরে রিকশা চালাই। গরমে যখন শরীর পুইড়া যায়, তখন এই কৃষ্ণচূড়ার গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বসি। মনে হয়, মার কোলে বসছি। শহর বড় হইছে, বিল্ডিং হইছে, কিন্তু এই গাছগুলা না থাকলে শহরও বুঝি মরুভূমি হইত।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় যাত্রীই গাছের পাশে রিকশা থামায়। বলে, ভাই, একখান ছবি তুলি। শহর যদি এমনই থাকত, হইত না ভালো?’

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাবিহা নূর বলেন, ‘চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়া যেমন কঠিন, তেমনি ক্লান্তিকর। কৃষ্ণচূড়ার নিচে কয়েক মিনিট বসলে মাথা ঠান্ডা হয়ে যায়। গাছটা আমাদের এক ধরনের থেরাপি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রবীণ সাংবাদিক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো এখন শুধু শোভা নয়, এটি শহরের সৌন্দর্য রক্ষার প্রতীক। ফরিদপুরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে এই গাছগুলো অমূল্য।’

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস. এম. আবদুল হালিম কালবেলাকে বলেন, ‘ফরিদপুর শহরের হৃদয়ে কৃষ্ণচূড়া আজ জীবন্ত কাব্য। আমাদের কলেজ চত্বরে যে শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে, তা শুধু ছায়া দেয় না, ইতিহাসও বয়ে নিয়ে চলে। ছাত্রছাত্রীরা এর নিচে বসে গান বাঁধে, কবিতা লেখে, সৃজনশীল চর্চা করে। আমরা চাই, ফরিদপুরজুড়ে এমন আরও সবুজ উদ্যোগ হোক।’

ফরিদপুরের বিশিষ্ট বৃক্ষপ্রেমী মোস্তাফিজুর রহমান লাবলু বলেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার ছাদে বাগান করেছি। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটছে, ভেজালমুক্ত ফল ও সবজি খাচ্ছি। পাশাপাশি অক্সিজেনের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। আমার ছাদ বাগান হয়ে উঠেছে অক্সিজেন চেম্বার। আমার ছাদ বাগান দেখে অনেকেই নতুন করে ছাদ বাগান করেছে।

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings