মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানাজা ও শেষকৃত্যের ব্যবস্থা
তার জানাজার নামাজ আজ দুপুর দেড়টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা সংলগ্ন আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। নব্বই-ঊর্ধ্ব সফিউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড জটিলতা, ফ্যাটি লিভার এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বেশ কিছুদিন ধরে স্ট্রেচারে চলাফেরা করতেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে কে এম সফিউল্লাহ ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তার নেতৃত্বেই ওই রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নিয়মিত আর্মি ব্রিগেড গঠনের পর ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্বে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
কর্মজীবন
১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্ম নেওয়া কে এম সফিউল্লাহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে তিনি মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন এবং ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ সালে দেশে ফিরে তিনি এক বছর ওএসডি অবস্থায় ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৯৫ সালে কে এম সফিউল্লাহ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় ভূমিকা
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে ২০০৭ সালে গঠিত সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামে তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কে এম সফিউল্লাহর মৃত্যুতে দেশ হারাল একজন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষী, বিশিষ্ট দেশপ্রেমিক ও সমাজের একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব।