দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা সিরাজগঞ্জের একমাত্র সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কয়েক বছর ধরে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনিয়মে খামারটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন তো দূরের কথা, তেমন রাজস্বও আসত না। প্রতি বছর সরকারকে এ খামার রক্ষায় লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আয় না থাকলেও ব্যয় ছিল অনেক বেশি। খাদ্য, বিদ্যুৎ, বেতনসহ সব খরচ সরকারকেই বহন করতে হয়েছে।
বর্তমানে খামারটিকে স্বাভাবিকভাবে চালানোর চেষ্টা চলছে। খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে মাত্র ১০ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কয়েক বছরের লোকসান এত দ্রুত কাটানো সম্ভব নয়। জনবল ও অবকাঠামোগত সংকটে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদর উপজেলার শিয়ালকোল গ্রামে ৩ একর জমিতে ১৯৮২ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল বেকার যুবক, দরিদ্র কৃষক ও দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করা। স্বল্পমূল্যে ডিম ও বাচ্চা সরবরাহ করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
খামারে রয়েছে সাতটি শেড, একটি প্রশাসনিক ভবন, ব্যবস্থাপকের বাসা, অতিথিকক্ষ, বিক্রয়কেন্দ্র এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন।
ব্যবস্থাপক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খামারে ফাউমি, সোনালি ও আড়াইয়ার জাতের মুরগি পালন করা হয়। চারটি শেডে আছে প্রায় ২
হাজার ডিম পাড়া মুরগি। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রান্তিক খামারিরা এখান থেকে বাচ্চা ও ডিম কিনে থাকেন।
একদিন থেকে সাত দিনের বাচ্চা বিক্রি হয় মাত্র ১৫ টাকায়। ৫০ থেকে ৭০ দিনের বাচ্চা ১০০ টাকা, আর ৭০ থেকে ৯০ দিনের বাচ্চা বিক্রি হয় ১১৫ টাকায়। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয় ৩২ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি ডিম ৮ টাকা। গত এক বছরে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার বাচ্চা। এ বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ডিম। এসব বিক্রি করে রাজস্ব এসেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, খামারটি চারপাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই ডানে প্রশাসনিক ভবন ও বামে বিক্রয় কেন্দ্র। ভিতরে সাতটি টিনশেড। চারটিতে ডিম পাড়া মুরগি এবং বাকি তিনটিতে বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা। রয়েছে একটি মেশিনারিজ রুম, যেখানে ডিম থেকে নিয়মিত বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে ডিম ও বাচ্চা পাওয়া যায়। মুরগির জাত দেশি ধরনের হওয়ায় গ্রামের পরিবেশে সহজেই পালনযোগ্য। বাচ্চার মান ভালো হওয়ায় চাহিদাও বেশি। ফলে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যান। সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় এক-দুই সপ্তাহ।
খামারে বাচ্চা কিনতে আসা ইমরান সরকার বলেন, ‘সিরিয়াল দিয়ে গেছি। আশা করি আগামী সপ্তাহে বাচ্চা পাব। এখানে দাম অনেক কম, তাই চাহিদাও বেশি।’ যুবক আলী আহমেদ বলেন, ‘খামারটি আরও উন্নত হলে এলাকার মানুষ সাশ্রয়ী দামে ডিম ও বাচ্চা পেত। বেকার যুবকরা এখান থেকে বাচ্চা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারত।’
খামারের ব্যবস্থাপক বাহালুল করিম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় খামারের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি এসে শেডসহ অনেক কিছু আধুনিকভাবে সংস্কার করেছি। এখন ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন অনেক বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার মুরগির বাচ্চা প্রায় দেশি জাতের মতো। যেকোনো পরিবেশে পালনযোগ্য হওয়ায় চাহিদা ব্যাপক। গ্রামের নারীরাও এসব বাচ্চা লালন-পালন করেন।’ বর্তমানে ১৭ জন জনবলের স্থলে রয়েছে মাত্র ছয়জন। ব্যবস্থাপক বলেন, ‘এত বড় খামার চালাতে এই জনবল খুবই অপ্রতুল। কার্যক্রম ঠিকভাবে চালাতে হলে সরকারি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।’