X

চমক জাগানো শখের ছাদবাগান

শৈশব কেটেছে সবুজের সঙ্গে। চারপাশের বিচিত্র বুনো ফুলের বর্ণাঢ্যতা তাঁকে রঙিন দুনিয়ার সন্ধান দিয়েছিল। কিন্তু যাপিত জীবনের নানান টানাপোড়েনে দীর্ঘ একটি সময় সেই সবুজকে নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি জান্নাতুল মাসুদের। অবশেষে সেই সুযোগ এল একদিন। নগরেই বুনলেন তাঁর প্রিয় গাছগুলো। ধানমন্ডির একটি বাড়ির ছাদে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তনের জায়গাটিতে তৈরি করলেন পরিকল্পিত এক শখের বাগান। মাত্র দুই বছর আগে বানানো সেই শখের বাগানটির সাফল্য তাঁকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। গত এক বছরে এই ছাদবাগান থেকে উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলের পরিসংখ্যান জানলে শুধু জান্নাতুল মাসুদ কেন, আপনি নিজেও চমকে যাবেন!

গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ছাদবাগান থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন সাড়ে ৪ মণ বেগুন, লাউ ৫৫টি, বাঁধাকপি ১০০টি, ফুলকপি ৪০টি, ব্রকলি ৪২টি, কচুর লতি ৮ কেজি, বারোমাসি শজনে ১০ কেজি, মরিচ ৮০–৯০ কেজি, ধুন্দুল ১ টন, শিম ৪ কেজি এবং টমেটো ১৫ মণ ও কলমিশাক ১৫ কেজির মতো। এটা তো শাকসবজির হিসাব। লেবু ও অন্যান্য ফলের হিসাব এখানে নেই।

সম্প্রতি দেখতে গেলাম তাঁর চমকপ্রদ ছাদবাগানটি। বাগানে ঢুকতেই গাছভর্তি কয়েকটি পেয়ারাগাছ চোখে পড়ল। একটি গাছে কিছু লোভনীয় পেয়ারা ঝুলছে। জান্নাতুল মাসুদ গাছ থেকে দুটো তরতাজা পেয়ারা তুলে দিলেন আমাদের। অতিথি আপ্যায়নের এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি আর কী হতে পারে! কর্নারের কয়েকটি গাছে বেগুন ঝুলছে। একটি গাছে তখনো কয়েকটি শরিফা অবশিষ্ট আছে। একই গাছে লেবু আর লেবুর ফুল দেখা গেল। এক পাশে বেশ বড় একটি ধুন্দুলের মাচা।

সেখানে ১৫-২০টি ধুন্দুল রূপসী বাংলার কোনো এক মধুর দৃশ্যের মতো হয়ে আছে। জীবনানন্দ দাশের কাব্যভাষায় Ñ‘….ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে—এইখানে ধুন্দুল লতাতে’। মাচার পাশে বারোমাসি শজনে, আমড়া আর কুলগাছ। চারপাশে বিশেষ পদ্ধতিতে লাগানো হয়েছে কচু আর এমডি-টু জাতের আনারস। এই আনারস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বাণিজ্যিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এক পাশে আছে টক আতা বা করোসল, জামরুল, জলপাই, বারোমাসি কাঁঠাল, বিভিন্ন জাতের আম ও গ্রীষ্মকালীন টমেটো। থাই লংগ্যান বা কাঠলিচুর নতুন গুটি দেখা গেল একটি গাছে। অপরিপক্ব বাতাবিলেবু আর সফেদাগুলো পাকার জন্য আরও কিছুদিন তো অপেক্ষা করতেই হবে।

বাগানজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু আলংকারিক উদ্ভিদ—বটের বনসাই, ড্রাসিনা, কাঠগোলাপ, জবা, ল্যান্টানা, বাগানবিলাস, হলদে রঙের ঘণ্টাফুল, নয়নতারা, বাহারি কচু, টগর, বেলি, মধুমঞ্জরি, ট্রাম্পেট ক্রিপার, রসুন্দিলতা, রঙ্গন, লালপাতা, কুন্দ, নিম ইত্যাদি।

মৌসুমি শাকসবজির জন্য কিছু স্থান নির্দিষ্ট করা রয়েছে। বিশেষ করে বাগানের এক পাশে থাকা মাচার কথা বলা যায়। সেখানে লাউয়ের পর ধুন্দুল লাগানো হয়েছে। আবার শীতের কয়েকটা দিন আগে লাগানো হবে লাউ ও কুমড়া। বড় টবগুলো বসানোর জন্য বিশেষ ধরনের লোহার স্ট্যান্ড ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে টবের নিচে অনায়াসেই বৃষ্টির পানি গড়িয়ে চলে যেতে পারে। এ কারণে টবগুলোতে কোনো পানি জমে থাকতে দেখা গেল না।

জান্নাতুল মাসুদের কাছে এই বাগান তৈরি একেবারেই সহজ কোনো কাজ ছিল না। প্রথম বাধা ছিল ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতি। সমিতি থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ছাদে কোনো বাগান করা যাবে না। কিন্তু দমে যাননি তিনি। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাগানসজ্জার কাজটি করেছেন। এই চিত্র অবশ্য ঢাকার অধিকাংশ বাড়ির। সিটি করপোরেশন যতই প্রণোদনার ব্যবস্থা করুক, তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বাগানবিদ্বেষী মালিক সমিতিগুলোর। বৃক্ষপ্রেমীরা রীতিমতো লড়াই করে তাঁদের ভালোবাসার কাজটি জারি রেখেছেন।

কৃতী বাগানি জান্নাতুল মাসুদের সন্তানেরা বড় হয়েছেন। তাঁদের পেছনে এখন আর ছোটাছুটি করতে হয় না তাঁকে। সেই অফুরন্ত সময় থেকেই খানিকটা তিনি ব্যয় করেন বাগান পরিচর্যায়। তবে এমন সাফল্যের পেছনে তাঁর স্বামী কৃষিবিদ মেহেদী মাসুদের অবদানকে তিনি কোনোভাবে ছোট করে দেখছেন না। তাঁর প্রেরণা ও নিরন্তর সহযোগিতা বাগানটিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings