X

চাহিদা মেটাতে চড়া সুদে ধার করছে ব্যাংকগুলো

দেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে ঘুরছে। নানা উদ্যোগ নিয়েও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে পারেনি আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বেশ কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে তারল্য সংকটেও ভুগছে ব্যাংক খাত। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কলমানির সুদহারও। ছয় মাসের ব্যবধানে কলমানিতে গড় সুদহার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলো ধারের পরিমাণ বাড়িয়েছে, আর এজন্যই কলমানির সুদহার বাড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার কলমানি বাজার থেকে তিন হাজার ১৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। এর গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ। এদিন কলমানিতে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এক রাত বা এক দিনের ধারের জন্য এই সুদহার ধার্য করা হয়।

 

এর আগে গত মঙ্গলবার কলমানি বাজার থেকে দুই হাজার ৫০১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ধার নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। এদিনও গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের শেষ দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন কলমানি মার্কেটের সুদহার একই ধারায় ছিল।

তবে গতকাল বুধবার যেসব ব্যাংক কলমানি থেকে চার দিনের জন্য টাকা ধার করেছে, সেগুলোকে সুদ গুনতে হয়েছে আরও বেশি। চার দিনের ধারে সুদহার উঠেছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এই হারে ১১০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে দুটি ব্যাংক। এ ছাড়া ছয় দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার আরও বেশি। গতকাল ছয় দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সাত দিনের ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ১৪ দিনের ধারের ক্ষেত্রে ছিল ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় এক দিনের ধার হিসেবে।

কলমানি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেয়া-নেয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকে তাদের কাছ থেকে ধার করে। এজন্য সুদ দিতে হয়। সুদহার নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেয়া-নেয়া করলেও দিন শেষে লেনদেন ও সুদের তথ্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে কলমানিতে এক দিনের জন্য টাকা কর্জ বা ধার দেয়ার ক্ষেত্রে গড় সুদের হার ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল। এরপর গত ১৩ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত এই সুদহার দুই অঙ্কের বা ১০ শতাংশ নিচে ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে কলমানি বাজারের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের পর গতকালই প্রথম কলমানিতে এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ১০ দশমিক ২৩ শতাংশে উঠেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে কয়েকটি ব্যাংক ব্যাপক তারল্য সংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট এতই প্রকট হয়েছিল যে, গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ফেরত দিতে পারছিল না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় তারল্য সংকট কিছুটা কমেছে। অপরদিকে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক বেশি লাভের আশায় কলমানির বদলে বিল-বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে কলমানিতে টাকা ধার দেয়া বা এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় বিদেশি ব্যাংকগুলো কলমানিতে বেশি অর্থ লগ্নি বা ধার দিত। বর্তমানে এই বাজারে বিদেশি ব্যাংকের অংশগ্রহণ একেবারেই কমে গেছে।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত বছরের ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালের মে মাসের পর থেকে ১১ বারের মতো নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। নীতি সুদহার বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ গত বছরের মে মাসে সে নীতি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে বেড়ে যায় সব ঋণের সুদহার।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings