X

চীনে বাদুড়ের দেহে নতুন ভাইরাস শনাক্ত

চীনের ইউনান প্রদেশে বাদুড়ের দেহে দুটি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই নতুন ভাইরাসগুলোর সংক্রমণে মানবদেহে তীব্র মস্তিষ্কজনিত প্রদাহ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ হতে পারে। এসব ভাইরাসকে ঘিরে গবেষকরা ‘জরুরি উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

গত মঙ্গলবার প্লস প্যাথোজেনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের ফলের বাগানগুলোতে বসবাসকারী বাদুড়ের মধ্যে এই ভাইরাসগুলোর সঙ্গে আরও কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

চার বছর ধরে ইউনানের পাঁচটি এলাকার ১০ প্রজাতির ১৪২টি বাদুড়ের কিডনি থেকে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ২২টি ভাইরাস পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ২০টি সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ছিল হেনিপাভাইরাস শ্রেণির, যা নিপাহ ও হেনড্রার মতো একই জেনাসে অন্তর্ভুক্ত। এই ভাইরাসগুলো আগের মহামারিতে মানুষের মধ্যে উচ্চ মৃত্যুহার ঘটিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, ‘এই ভাইরাসগুলো সাধারণত ফলখেকো বাদুড়ের শরীরে বাস করে এবং তাদের প্রস্রাব বা লালার মাধ্যমে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের মূল মাধ্যম হতে পারে দূষিত ফল বা খাদ্য।’ এই গবেষণা অঞ্চলটিতে বাদুড় থেকে পশুসম্পদ বা মানুষের মধ্যে অনুরূপ নতুন ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইউনান ইনস্টিটিউট অব এন্ডেমিক ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষকদের মতে, এই ভাইরাসগুলো মারাত্মক নিপাহ ও হেনড্রা প্যাথোজেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নিপাহ ও হেনড্রা মানুষের মধ্যে মস্তিষ্কে গুরুতর প্রদাহ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। নিপাহ একটি প্রাণঘাতী প্যাথোজেন, যা মানুষের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। নিপাহ ভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে ৩৫–৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু দেখা গেছে। হেনড্রা ভাইরাস ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে মানুষ ও ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীরা জানান, বাদুড়ের দেহে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীর পুরো পরিসর এখনো অজানা। আগের গবেষণাগুলোর বেশির ভাগ বাদুড়ের বিষ্ঠা নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে প্রথমবারের মতো একাধিক অঙ্গের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলেন, ‘এটি শুধু ভাইরাস চিহ্নিত করা নয়, বরং বাদুড় থেকে মানুষের বা গৃহপালিত প্রাণীতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বোঝার জন্য একটি নতুন পথ উন্মোচন করেছে।’

এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা মহামারির ঝুঁকি কমাতে বাদুড়ের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে উপস্থিত জীবাণু শনাক্তে পূর্ণাঙ্গ ও পদ্ধতিগত গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন। ইউনান প্রদেশকে বাদুড়ের বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

অনন্য রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে বাদুড় অসংখ্য অণুজীবের একটি প্রাকৃতিক আধার। এর মধ্যে মানুষের মধ্যে সংক্রমণকারী উল্লেখযোগ্য প্যাথোজেনও রয়েছে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির সঠিক উৎস এখনো অস্পষ্ট। করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস হিসেবেও বাদুড়ের একটি প্রজাতি ‘হর্সশু ব্যাট’-কে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে। নতুন এই গবেষণা সেই সন্দেহকে আরও জোরদার করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই ফলাফলগুলো বাদুড়ে থাকা অণুজীবের বৈচিত্র্য বোঝার জন্য একটি বহু-অঙ্গ স্ক্রিনিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বাদুড় থেকে ছড়ানোর ঝুঁকি আরও ভালোভাবে মূল্যায়নের জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গভিত্তিক পূর্ণ স্পেকট্রাম অণুজীব বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ভাইরাসগুলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings