মানবমস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করেছে চীন, যাতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তি। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি শুধু চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলতে সক্ষম হয়েছেন।যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে চীন এই প্রযুক্তির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।চীনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, প্রথম পরীক্ষাটি করা হয়েছে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ওপর, যিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারটি অঙ্গ হারিয়েছেন। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি শুধু চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভিডিও গেম ‘মারিও কার্ট’ খেলতে সক্ষম হন। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীরা রোবোটিক বাহু কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এজেন্টও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন ব্রেইন সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজিতে (সিইবিএসটিআই) এই পরীক্ষা চালানো হয়। এতে রোগীর খুলির ভেতর একটি ক্ষুদ্র গর্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে নরম ইলেকট্রোড বসানো হয়, যা স্নায়ুর কার্যকলাপ শনাক্ত করে।সিইবিএসটিআইর গবেষক ঝাও ঝেংতুও বলেন, ‘ইলেকট্রোডটি এতটাই নরম যে, এটি বাঁকানোর জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তা মস্তিষ্কের দুটি নিউরনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার শক্তির সঙ্গে তুলনীয়। এর ফলে ইলেকট্রোড দীর্ঘসময় ধরে মস্তিষ্কের টিস্যুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে। এতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয় না বা চিপটি বাদ দেওয়ার প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না।’
বিসিআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্টার্টআপ নিউরালিঙ্ক ইতোমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। নিউরালিঙ্কের চিপ ব্যবহার করে পঙ্গু ব্যক্তি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
ইলন মাস্ক দাবি করেন, আগামী দশ বছরে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে নিউরালিঙ্ক চিপের আওতায় আনা হবে। তার মতে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয়ের পথ খুলে দেবে। প্রাথমিক নিউরালিঙ্ক পরীক্ষাগুলো কোয়াড্রিপ্লেজিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর নিবদ্ধ ছিল। নিউরালিঙ্কের প্রধানের মতে, বিসিআই ডিভাইসগুলো শেষ পর্যন্ত মানুষকে এআইর সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করবে, যা মানুষকে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্সের (এজিআই) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষমতা দেবে।সম্প্রতি নিউরালিঙ্ক নতুন করে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে, যা দিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইবিএসটিআই জানিয়েছে, তারা ২০২৮ সালের মধ্যে নিজেদের প্রযুক্তি বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে। প্রাথমিকভাবে এটি পঙ্গু ও মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্তদের জীবনমান উন্নত করতে চিকিৎসাযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের চিপ নিউরালিঙ্কের তুলনায় আকারে ছোট এবং আরও নমনীয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই গবেষণা কেবল চিকিৎসা নয়, ভবিষ্যতের মানব-মেশিন সম্পর্কেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।