চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টে দৈনিক রাজস্ব কমেছে ৪০ শতাংশ। ভারত সরকারের ভিসানীতির কারণে এ চেকপোস্টে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। আগে এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার নাগরিক দুই দেশে যাতায়াত করলেও বর্তমানে ৫০ থেকে ৭০জন যাত্রী যাতায়াত করছেন। এতে সরকারের দৈনিক আয় ২০ লাখ খেকে কমে ৫০-৬০ লাখে এসে ঠেকেছে। একই সাথে চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভ্যানচালকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবার ও চালু হয়।এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা স্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ট্রেন লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। অপর দিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে। যাতাযাত সুবিধা ও কম সময়ে কোলকাতা পৌছানোর অন্যতম রুট এটি। সেকারণে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর,ঝিনাইদহ,কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী,পাবনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন আঞ্চলের মানুষ এই সীমান্ত ব্যবহার করে যাতায়াত করে আসছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কমতে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত সরকার। শুধুমাত্র মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। এজন্যই মূলত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে শূন্যের কোটায়। তবে ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাওয়া-আসা করতে পারছেন।
দর্শনার জয়নগর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে। আগে ভোর থেকেই পাসপোর্টধারী যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না।
দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আল ইকরাম অমিত জানান, জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ জন নাগরিক ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। যাতায়াতকারী প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা ‘ভ্রমণ কর’ হিসেবে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর যাত্রীর সংখ্যা কমতে কমতে ৫০ থেকে ৬০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো রাজস্ব আসছে। এই রুটে সাধারণত পর্যটকরা বেশি ভারতে যাতায়াত করেন। কিন্তু ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রাখায় বর্তমানে যাত্রী সংখ্যা নেই বললেই চলে। ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার একেবারে শূন্য হয়ে যাবে।
এদিকে জয়নগর চেকপোস্টে পাসপোর্টধারী যাত্রী কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলে। সরেজমিনে দেখা যায়, আগে যেখানে দিনভর পর্যটকদের আনাগোনায় জমজমাট থাকতো, সেখানে এখন সবকিছু খাঁ খাঁ করছে। চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল মানিচেঞ্জার, স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও লোকসানের মধ্যে পড়েছে।অলস সময় কাটাচ্ছেন থ্রি হুইলার চালকরা ।
চা-দোকানি সাহার আলী বলেন, সকালে এসে দোকান খুলি। আগে প্রচুর ভিড় থাকলেও এখন খুব একটা এ বেচা-বিক্রি নেই। যাত্রীই আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় যেতে হবে।
দর্শনা মানি চেঞ্জারের মালিক আরিফ হোসেন বলেন, ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা এক্সচেঞ্জ করে থাকি। এদের যাতায়াত কমে গেছে। কমেছে কাজও। কাটছে আলস সময়।