X

জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে সফল শিপলু

জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে ৪৫ বিঘা জমিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে আলোচনায় এসেছেন উদ্যোক্তা হেদায়েত হোসেন শিপলু। তার এই উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে অর্ধশত নারী-পুরুষের। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ আসছেন ড্রাগনের বাগান দেখতে ও ফল কিনতে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের নানা জেলায়। উদ্যোক্তাকে সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চাষ আরও বিস্তৃত হলে বেকারত্ব কমবে। বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে।জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কোকতাড়া তালতলী এলাকার বাসিন্দা হেদায়েত হোসেন শিপলু। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি ২০২৪ সালে নিজ এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পাশে ৪৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ড্রাগন ফলের বাগান। যার নাম দিয়েছেন ‘গ্যালাক্সি ড্রাগন বাগান’। এখানে স্থানীয় আদিবাসী নারীসহ প্রায় ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিশাল এই বাগানে রয়েছে প্রায় ১ লাখ ড্রাগন গাছ। বর্তমানে গাছে ঝুলছে সাদা ও হলুদ রঙের ফুল, আসতে শুরু করেছে ফল। এরই মধ্যে বাজারজাত শুরু করে ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি।হেদায়েত হোসেন শিপলু বলেন, ‘২০২১ সালে একটি মিশ্র ফলের বাগান করেছিলাম। সেখান থেকে উৎসাহ পেয়েই ২০২৪ সালে ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগনের বাগান করি। এক বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে ও অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছি। প্রতি কেজি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই মৌসুমে দেড়শো টন ফল পাব বলে আশা করছি। আদিবাসীসহ প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ এখানে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরও জমিতে ড্রাগন চাষের পরিকল্পনা আছে। তাহলে কর্মসংস্থানও বাড়বে। পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগও নিচ্ছি।’

সদরের নুরপুর গ্রামের আল আমিন হোসেন বলেন, ‘জেলায় এত বড় ড্রাগনের বাগান আছে, আগে জানতাম না। দেখতে এসেছি। এখন গাছে ফুল ফুটেছে, ফল ধরেছে। দারুণ লাগছে।’

পাঁচবিবির বাগজানা গ্রামের ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এত বড় ড্রাগনের বাগান আমাদের এলাকায় আগে কখনো দেখিনি। দেশে ৪৫ বিঘার ড্রাগন বাগান কয়টা আছে তাও জানা নেই। দেখে মুগ্ধ হয়েছি। শিপলুর এই উদ্যোগ থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাও এমন কিছু করার কথা ভাবছি।’

 

বাগানের শ্রমিক শিউলী রানী বলেন, ‘আমি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করি। প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পাই। এতে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি, পরিবারেরও কিছুটা সাহায্য হয়। আমার মতো আরও অনেক মেয়ে এখানে কাজ করে সংসার চালায়।’

ফরিদুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘এই বাগানে প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আদিবাসী নারী ও বেকার যুবক। এই বাগান গড়ে ওঠায় তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই, এতে সংসার চলে।’

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, ‘চাকরির পাশাপাশি ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করে সফল হয়েছেন হেদায়েত হোসেন শিপলু। যাতে নিরাপদভাবে এই ফল উৎপাদিত হয়, সে বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার, কীটনাশক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু উপযোগী ফসল হওয়ায় জয়পুরহাটের মাটিতে ড্রাগনের চাষ সম্ভব হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা, প্রযুক্তি ও বাজারজাতের ব্যবস্থা হলে এই চাষ বিস্তৃত হবে। তাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে চাষ বাড়ানো গেলে ড্রাগন হতে পারে দেশের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফল। কৃষকের আয়ের পাশাপাশি বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাই এই খাতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বিত কর্মসূচির ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings