X

জোনাকির আলোয় বৈদ্যুতিক বাতির বিকল্প!

জোনাকির আলোয় বৈদ্যুতিক বাতির বিকল্প!

রাতের নিস্তব্ধ অন্ধকারে মিটমিট করে জ্বলা জোনাকির আলো শুধু আমাদের চোখই জুড়ায় না, এটি ভবিষ্যতের টেকসই শক্তির এক অনন্য দিশাও দেখাচ্ছে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির শরীরে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় আলো উৎপাদনের পদ্ধতি হয়তো এক দিন আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর নতুন পথ দেখাবে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতি আজ আমাদের নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা জোনাকির এই প্রাকৃতিক আলো উৎপাদন পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তারা এমন জীবন্ত আলো তৈরি করতে চাইছেন যা রাস্তার বাতি বা অফিসের আলো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি বিপ্লব আনতে পারে; কোষের ভিতরের অণুজীব পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে রোগ শনাক্তকরণের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে।

এই গবেষণার একটি চমকপ্রদ দিক হলো-জিনপ্রযুক্তির ব্যবহার। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই জোনাকির জিন ব্যবহার করে গাছপালাকে আলোকিত করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। ভাবুন তো, এমন এক ভবিষ্যতের কথা যেখানে রাস্তার পাশের গাছগুলোই সূর্যাস্তের পর প্রাকৃতিক আলো বিকিরণ করবে! ফ্রান্স ও আমেরিকার কিছু গবেষণাগারে এ ধরনের আলোকিত গাছ ও শৈবাল নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ চলছে।

জোনাকির দেহে ঘটে চলেছে এক অসাধারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া। লুসিফেরিন নামক এক বিশেষ পদার্থ লুসিফেরেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তৈরি করে সেই মোহনীয় আলো। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স। এই আলোর সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো এর শতভাগ দক্ষতা। সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্ব বা এমনকি আধুনিক এলইডি লাইটেও কিছুটা তাপ অপচয় হয়, কিন্তু জোনাকির আলো সম্পূর্ণ তাপহীনভাবে উৎপন্ন হয়। তবে এই প্রযুক্তির সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। জোনাকির আলোর তীব্রতা এখনো বেশি আলোর চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে এই পদ্ধতি বড় আকারে প্রয়োগ করা বেশ ব্যয়বহুল। আর জিন-সম্পাদিত জীব ব্যবহার করলে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

তবুও এই গবেষণা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা নেই, সেখানে এই প্রাকৃতিক আলো উৎপাদন পদ্ধতি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। হয়তো এক দিন প্রকৃতির এই ক্ষুদ্র শিক্ষক থেকেই আমরা শিখে নেব শক্তির এক নতুন ভাষা।

লেখক : পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings