X

টাঙ্গুয়ার হাওরের পানিতে বিপজ্জনক মাত্রায় ভারী ধাতু

দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশগত বিপর্যয়ের চিত্র সামনে এনেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জের এ হাওরের পানিতে পাওয়া গেছে বিপজ্জনক মাত্রায় ছয় ধরনের ভারী ধাতু। পর্যটন, কৃষি ও শিল্পবর্জ্য হাওরের এই দূষণের জন্য দায়ী বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ঘেঁষা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার টাঙ্গুয়ার হাওর। সবুজ পাহাড় আর নীল জলরাশির অনন্য মিলনে গঠিত এই হাওর দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। তাহিরপুর উপজেলার এই হাওরে প্রতিদিন ছুটে আসেন শত শত প্রকৃতিপ্রেমী। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় হাওরের পানিতে উচ্চমাত্রায় বিপজ্জনক ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ একটি দল চলতি বছরের এপ্রিলে হাওরের ১২টি স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায়। গবেষণায় দেখা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানিতে নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিসা, জিংক, তামা ও ম্যাঙ্গানিজ- এই ছয়টি ভারী ধাতু অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বহু গুণ বেশি রয়েছে।

বিশেষত বারেক টিলার পানিতে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতুর উপস্থিতি ধরা পড়ে। প্রতি লিটার পানিতে গড়ে ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ০.৩৬৪ মিলিগ্রাম এবং নিকেল ০.৩৭৩ মিলিগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় নির্ধারিত মাত্রার অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি লিটার পানিতে ক্রোমিয়ামের সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম এবং নিকেলের ক্ষেত্রে ০.০৭ মিলিগ্রাম (বাংলাদেশের বিধিমালায় ০.০২ মিলিগ্রাম)। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে জিংক ০.২১০, তামা ০.২১৭, ম্যাঙ্গানিজ ০.১৫৩ এবং সিসা ০.১০৮ মিলিগ্রাম মাত্রায় পাওয়া গেছে- সবগুলোই নিরাপদ সীমার বাইরে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতাহা নূর রুবেল বলেন, দূষণের প্রধান উৎস হাউজবোট থেকে নিক্ষিপ্ত বর্জ্য, কৃষি জমির কীটনাশক, ও সীমান্তঘেঁষা শিল্পবর্জ্য। হাওরের পর্যটন এখন যেমন সম্ভাবনা, তেমনই হুমকি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন শত শত নৌকা হাওরে চলাচল করে। পর্যটকেরা পানি ও তীরে ফেলে যান প্রচুর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অন্যান্য আবর্জনা। ইঞ্জিনচালিত নৌকার আওয়াজ মাছ ও পাখির বিচরণে বাধা সৃষ্টি করছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব বর্জ্য আটকে থাকে কৃষিজমিতে, যার ফলে ফসল উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ভারী ধাতুর দূষণ শুধু জলজপ্রাণী নয়, মানুষের শরীরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এমন পানি দিয়ে রান্না করা হলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরসহ দেশের অন্যান্য হাওর রক্ষায় একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয়দের মতামত নেয়া হয়েছে। পর্যটন, কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নের সুযোগ ধরে রেখে হাওরের পরিবেশ সুরক্ষাই হবে এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।

পর্যটন বিকাশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ভারসাম্য না থাকলে ভবিষ্যতে টাঙ্গুয়ার হাওরের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই পরিবেশদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে হাওর রক্ষায় সবার সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে প্রকৃতির প্রতি সচেতনতার প্রমাণ।

সূত্র- বণিক বার্তা।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings