নরসিংদী রেলস্টেশনে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে দুই হাত হারানো ও মাথায় আঘাত পাওয়া চার বছর বয়সী মেয়েশিশু সিনহার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) সে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে। চিকিৎসকেরা স্বজনদের জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির সঙ্গে আছেন তার ফুফা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকালের দুর্ঘটনায় সিনহার মা-বোনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিনহার দুই হাত ট্রেনে কাটা পড়ে। সে মাথায় আঘাত পাওয়ায় তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না। চিকিৎসকেরা তার দুই হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। বেঁচে থাকলে বাকি জীবনটা তাকে দুই হাত ছাড়াই চলতে হবে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে গৃহবধূ সাবিনা আক্তার (৩০) ও তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে মাইমুনা নিহত হয়েছে। এ সময় দুই হাত কাটা পড়ে ও মাথায় গুরুতর আঘাত পায় নিহত সাবিনার বড় মেয়ে সিনহা। প্ল্যাটফর্মটিতে অবস্থান করা শত শত মানুষের চোখের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, দুই হাত কাটা পড়া শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে শুনেছেন। গতকাল রাতে নিহত মা-মেয়ের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
নিহত সাবিনা আক্তার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের মুন্সেফেরচর এলাকার বাসিন্দা মালয়েশিয়াপ্রবাসী জয়নাল মিয়ার স্ত্রী। কেনাকাটা করতে মুন্সেফেরচর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে নরসিংদী শহরে এসেছিলেন সাবিনা। কেনাকাটা শেষে গতকাল ফেরার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তাঁরা।
রেলওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাবিনা দুই মেয়ে ও অপর এক শিশুকে সঙ্গে নিয়ে রেলস্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইন পার হয়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যান। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওঠার পরই তাঁর বড় মেয়ে সিনহা ঘুরে রেললাইনের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি এই স্টেশন পেরিয়ে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। সিনহা ট্রেনে কাটা পড়তে যাচ্ছে দেখে কোলে থাকা মাইমুনাকে নিয়ে তাকে টেনে আনার চেষ্টা করেন সাবিনা। এ সময় তিনজনই ওই ট্রেনে কাটা পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাবিনা ও মাইমুনা।
পরে দুই হাত কাটা পড়া সিনহাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। নির্দিষ্ট চিকিৎসক না পেয়ে পরে স্বজনেরা আইসিইউ সুবিধাসংবলিত ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। দুই হাত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সিনহা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।