X

দশমাইল হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার কলা বেচাকেনা

দিনাজপুরের কাহারোলের দশমাইল মহাসড়কের পাশে বসেছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কলার পাইকারি হাট। ভোর থেকে আসছে ভ্যান, ভটভটি, পিকআপভর্তি কলা। প্রতিদিন কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এখান থেকে ট্রাকভর্তি কলা যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের নানা জেলায়। কৃষকরা পাচ্ছেন ন্যায্য দাম, পাইকাররা করছেন ভালো ব্যবসা। শত শত শ্রমিকেরও রোজগার হচ্ছে লোড-আনলোডে। সাগর কলার সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে সরবি ও মালভোগ। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন কলাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন।গত দুই মাস ধরে চলছে এই হাট। আগামী এক মাস পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে এ হাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কাহারোলের নয়াবাদ গ্রামের চাষি আবুল কালাম বলেন, ‘আমি ৪৮ শতক জমিতে কলা চাষ করেছি। আজ একশ কাঁদি কলা ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এভাবে দাম পেলে ভালো লাভ হবে।’ একই গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, ‘প্রতি কাঁদি ৪৯০ টাকা দরে বিক্রি করছি। সাড়ে ৩ বিঘা জমির কলা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হবে আশা করছি।’

হাটে প্রতিদিনের চিত্র হচ্ছে- ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক ট্রাক ভর্তি হচ্ছে কলায়। শ্রমিকরা লোডিং-আনলোডিংয়ে ব্যস্ত। এতে তাদেরও আয় হচ্ছে ভালো। শ্রমিক সলিমুদ্দিন বলেন, ‘আমরা কলার ট্রাক লোড দিয়েই দিনে ৬০০ টাকা আয় করি। এতে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।’ শ্রমিক আব্বাস আলী জানান, ‘এই হাটে প্রতিদিন কাজ পাই। দিনে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।’ অন্য শ্রমিক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা অনেকেই আগে বেকার ছিলাম। এখন এই কলার হাটে কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছি। এতে সংসারের খরচ চালানো সহজ হচ্ছে।’

এ হাটকে ঘিরে শুধু স্থানীয় নয়, দেশের নানা জেলা থেকে পাইকার আসছেন। ঢাকা থেকে আসা পাইকার হাফিজ উদ্দীন তালুকদার বলেন, ‘আমি প্রতিদিন তিন ট্রাক কলা কিনে ঢাকায় পাঠাই। চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসা ভালোই চলছে।’ ফেনী থেকে আসা পাইকার মনসুর আলী জানান, ‘এক মাস আগে দাম বেশি ছিল। এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবুও কৃষকেরা ভালো লাভ করছেন।’

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও এ হাটের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘কাহারোলসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে জমি কলাচাষের জন্য খুবই উপযোগী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার কলা ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা দিন দিন কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

দশমাইল হাটের ইজারাদার এরশাদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০টি ট্রাকে কলা বোঝাই হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাঁদি আর ছোট ট্রাকে প্রায় ৪৫০ কাঁদি কলা ধরে। তিনি আরও জানান, মৌসুমে এ হাটে লোড-আনলোডের কাজে অন্তত ১০০ শ্রমিক কাজ করেন। এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। শুধু হাটে কেনাবেচার মাধ্যমেই নয়, অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি বাগান থেকে কলা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। সব মিলিয়ে প্রতিদিন দিনাজপুরে কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হয়।কাহারোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩৩৫ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন, তাই সবাই খুশি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘কলা লাভজনক একটি ফসল। কৃষকদের উন্নত জাতের কলা চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন।’

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings