X

দারিদ্র্যকে জয় করে গেটিসবার্গ কলেজে ভর্তি, পেলেন ৪ কোটি টাকার স্কলারশিপ!

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর গ্রামের সাধারণ এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজে ভর্তি হওয়া মো. সাজিবুল ইসলাম একজন প্রেরণার নাম। তিনি এ বছর ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ চার কোটি টাকার ফিন্যান্সিয়াল এইড পেয়ে আলোচনায় এসেছেন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে তাঁর সংগ্রামী জীবন, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন সাজিবুল।

শৈশব ও পরিবার
“আমার জন্ম রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। দাদার নাম মো. সুলতান আহমদ। বাবা মো. রুহুল আমিন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন, মা হালিমা বেগম গৃহিণী। আমরা ছয় ভাইবোন ছিলাম, কিন্তু ছোট ভাই রাশেদের অকাল মৃত্যুতে আমি এখন পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য,” সাজিবুল তার পারিবারিক পরিবেশ সম্পর্কে বলেছেন।

তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ২১০ নম্বর চর শশিভূষণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে বরিশালে বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ভালো শিক্ষার পরিবেশে চলে যান, যেখানে কর্ণকাঠী ইজ্জাতুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

পড়াশোনায় আগ্রহ ও প্রেরণা
“খেলাধুলায় আগ্রহ বেশি থাকলেও পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা কখনো কমেনি। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও বইয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা অটুট ছিল। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের সম্ভাবনা যাচাই করতাম,” সাজিবুল স্মৃতিচারণ করেন।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার স্বপ্ন
বড় ভাই মো. আল আমিন যখন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে যান, তখন থেকেই সাজিবুলের মনের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার আগুন জ্বলে ওঠে। “বড় ভাইয়ের অর্জন আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা। তাই এইচএসসি’র পর দেশে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে বিদেশে শিক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি।”

শিক্ষাজীবনের ধাপ
সাজিবুল ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন ২১০ নম্বর চর শশিভূষণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর বরিশালের কর্ণকাঠী ইজ্জাতুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। নবম ও দশম শ্রেণি সম্পন্ন করেন বরিশালের আব্দুর রসিদ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আর্থিক পরিস্থিতির কারণে গ্রামে ফিরে এসে বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করেন। এরপর বড় ভাইয়ের পরামর্শে NextGen Abroad থেকে SAT ও Duolingo পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন প্রস্তুতি নেন সাজিবুল। ইংরেজিতে পারদর্শিতা অর্জনে ইউটিউব ও অনলাইনের ফ্রি রিসোর্স তার বড় সহায়ক ছিল।

গেটিসবার্গ কলেজের সঙ্গে পরিচয়
যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ বাছাই করার সময় কলেজ বোর্ডের ‘Big Future’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গেটিসবার্গ কলেজ সম্পর্কে জানেন। তার পরিষ্কার লক্ষ্য ও প্রোফাইল অনুযায়ী আবেদন করেন এবং উচ্চ মাত্রার ফিন্যান্সিয়াল এইড লাভ করেন।

চার কোটি টাকার স্কলারশিপের আনন্দ
“বিশ্বাস করতে পারিনি। চোখে পানি চলে এসেছিল,”– সেই অনুভূতি স্মরণ করে সাজিবুল বলেন, “আমার পরিবারের পাশাপাশি আমার পুরো গ্রামের জন্য এটি ছিল একটি গর্বের মুহূর্ত। প্রথমেই বাবাকে খবর দিয়েছিলাম, তিনি আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন।”

আর্থিক সংকটে টিকে থাকার লড়াই
করোনাকালীন সময় পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাস্ক ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় এক বছর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাস্ক বিক্রি করে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। “সমস্যা ছিল অনেক, কিন্তু হাল ছাড়িনি,” তার দৃঢ় প্রত্যয়।

দেশের জন্য স্বপ্ন
“আমি প্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই। আমার গ্রামের দরিদ্র মেধাবীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সুযোগ দিতে একটি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই,”– এ কথায় তার স্বপ্নের গভীরতা স্পষ্ট হয়।

পরামর্শ
“নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, ইন্টারনেটকে বন্ধু বানাতে হবে, ইংরেজিতে ভয় পেতে নেই এবং ব্যর্থতাকে সফলতার সিঁড়ি মনে করতে হবে। নিজের পটভূমি কখনো যেন সীমাবদ্ধতা না হয়, বরং শক্তি হয়।”

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings