X

দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে ২ হাজার কোটি তহবিল—এক ব্যাংকে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি (পাঁচ শর্তে)

দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত একটি বিশেষায়িত ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আর সেই ঋণের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দিচ্ছে সরকার। ব্যাংকটির নাম রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি অ্যান্ড ডেবট ম্যানেজমেন্ট (টিডিএম) বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। বছর বছর লোকসানে চলায় এবং খেলাপি ঋণ মূলধনের চেয়ে বেশি হওয়ায় রাকাবকে আরেক বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

সূত্র জানান, যে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই ২ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়নযোগ্য ঋণ নিচ্ছে রাকাব। আর সরকারের পক্ষে এ ঋণের গ্যারান্টার হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এর আগেও দুদর্শাগ্রস্ত ব্যাংকটিকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছিল। তবে সময়মতো ওই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বিশেষ কৃষি ও পল্লিঋণ’ কর্মসূচির থেকে এ ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয় ব্যাংকটি। গত আগস্টে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাকাব অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় ২০২৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন নতুন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে আবারও রাকাবকে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এই ঋণের গ্যারান্টার হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি অ্যান্ড ডেবট ম্যানেজমেন্ট (টিডিএম) উইংয়ের প্রধান মোহা. রাশেদুল আমীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকটিকে ঋণ না দিলে দেউলিয়া হয়ে যেত। কোনো ঋণ কার্যক্রমও পরিচালনা করতে পারত না। আগের ঋণ পরিশোধ না করার পরও নতুন করে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টিডিএম উইংয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি কৃষি উৎপাদন কার্যক্রমে ঋণ বিতরণ করে থাকে- সে কারণে উৎপাদনের বিষয়টি ভেবেই ব্যাংকটিকে পুনঃঅর্থায়নযোগ্য ঋণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিকেবির সঙ্গে রাকাবকে একীভূত না করে বছর বছর ঋণ আর মূলধন সহায়তা দিয়ে বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকটির কার্যক্রম দেখার কথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। তারা সেটি দেখবে। আর একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। যেহেতু একীভূত হয়নি- সে কারণেই ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকটিকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটিকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান দুটি শর্ত হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিসর বৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো। এ ছাড়া দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা এক মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়েছে। আগের নেওয়া ঋণের অর্থ সময়মতো পরিশোধ না করলে আর কোনো গ্যারান্টি দেওয়া হবে না বলেও ব্যাংকটিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এ সতর্কতা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ব্যাংকটির বিগত বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাকাবের বিতরণ করা ঋণের ২১ শতাংশই খেলাপি। পাশাপাশি উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত সুদে ঋণ দিয়ে বছরের পর বছর লোকসান করছে ব্যাংকটি। ফলে গত কয়েক বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এ লোকসানের পেছনে কাজ করেছে ব্যাংকটির উচ্চাভিলাসী কার্যক্রম। স্বল্প সুদে কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচির জন্য পুনঃঅর্থায়নের টাকা নিয়ে ঋণ দিয়েছে উত্তরাঞ্চলের হিমাগার মালিক ও অটোরাইস মিল মালিকদের।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাকাবের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। ঋণ দিয়ে টাকা তুলতে না পেয়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এখন ঋণ নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজছে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings