X

বৈষম্য রোধে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরসাথে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ব যাচ্ছে। যার ফলে ধনী-গরীবদের মাঝে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত এগোলেও নানারকম অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সম্পদের সুষম বণ্টনের অভাবে বেড়েছে ধনী-গরিবের বৈষম্য। গত এক দশকে এ বৈষম্য প্রকট থেকে আরও প্রকটতর হয়েছে। ধনীরাই দিন দিন ধনী

হচ্ছে। আর গরিবরা হচ্ছে অতি গরিব। যা দেশের সমাজ ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে তৈরি করেছে এক ধরনের অস্বস্তি আর অসমতা। আর তা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে শেষ অর্থবছরে (২০২২-২৩) মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা, যা আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭ টাকা। তবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জিত হলেও বৈষম্য নিরসন করা

সম্ভব হয়নি। ব্যাংক খাতের আমানতের অর্ধেকেরই মালিক দেশের কোটিপতিরা। অর্থাৎ ধনীরাই ধনী হচ্ছে। বৈষম্যের নির্দেশক গিনি সহগ সূচক এখন দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট। দশমিক ৫০০ পয়েন্ট পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ উচ্চ বৈষম্যের দেশ থেকে অতি সামান্য দূরত্বে আছে বাংলাদেশ। দেশে একজন গরিবের তুলনায় ধনীর আয় অন্তত ১১৯ গুণ বেশি। সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সবচেয়ে

বেশি ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতেই এখন দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর আয়ের এই অস্বাভাবিক বৈষম্য ভোগের ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব ফেলেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হলেও বিত্তবান পরিবারে নানা ধরনের ভোগ্যপণ্যের অপচয় হচ্ছে। তাদের একটি বড় অংশ প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি জিনিস কিনছে। ফলে

মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে যে বড় প্রভাব পড়ার কথা, তার অনেকটাই সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। আয় বৈষম্যের কারণে ভোগ বৈষম্য বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার বিষয়টি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন। আয় বৈষম্যের কারণে ভোগ বৈষম্য বেড়েছে এটি সত্য। তবে বেঁচে থাকার জন্য নিম্নআয়ের মানুষকেও ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। তাই বাজারে মূল্যস্ফীতি যতই বাড়ুক, তারপরও তাদের চাল-ডাল-তেলসহ নিত্য খাদ্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে শুধু আয় বৈষম্য কমিয়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এজন্য সরকারকে বাজারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কালো মুখোশদারীদের আইনের আওতায় আনুন
নিরীহ ও অসহায় মানুষদের জীবিকার স্বার্থে সরকার বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে তাদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলে। কিন্তু তারা কি তাদের

প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারতাছেন? পত্র-পত্রিকার তথ্য থেকে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় চলছে কালো মুখোশধারীদের লুট করার ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ভাতাসহ এতিমদের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট সুবিধার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতার টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। জানা যায়, ভাতা গ্রহীতার নামঠিকানা ঠিক থাকলেও টাকা পাচ্ছে না

সুবিধাভোগীরা। আবার ভাতার অযোগ্য হয়েও কেউ কেউ পাচ্ছে বারবার বরাদ্দের টাকা। শুধু তাই নয়, শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের নানা অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে-এই অফিস থেকে এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রতিনিয়ত

নয়-ছয় করছেন সংশ্লিষ্টরা। নীতিমালার কোনো নির্দেশনাই মানছেন না তারা। নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের সুবিধা পেতে একটি প্রতিষ্ঠান বা এতিমখানায় ১০ জন এতিম থাকতে হবে কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ভিন্ন বা মিথ্যা কৌশলের। জানা যায়, যেখানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীয়স্বজন ও সাজানো এতিমদের মধ্যে কাগজকলমে বিতরণের নামে লুটে নেওয়া হচ্ছে সরকারি প্রকল্পের লাখ লাখ

টাকা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সরকারি সহায়তার টাকা বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেও আত্মসাৎ করা হচ্ছে। তাদের পরিশোধ করার জন্য সৃষ্ট কৌশলেই এই দপ্তরের কথিত সুবিধাবঞ্চিতদের নাম কাগজকলমে থাকলেও বরাদ্দের টাকা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চিহ্নিত লোকজনের পকেটে।

পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলায় আটটি ইউনিয়নে আটটি এতিমখানায় ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ১৩২ জন। একটি সূত্রের

দাবি-এই সুবিধাভোগীর দুই-তৃতীয়াংশই ভুয়া। কারণ ২২-২৩ অর্থবছরে ১৩২ জন থাকলেও এর আগের বছরই ছিল
১৪২ জন। উক্ত বিষয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের ঠকানোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings