নড়াইল সদর উপজেলার হাড়িডাঙ্গা বিলে ঢুকতেই চোখে পড়ে বড় বড় মাছের ঘের। ঘেরের চারপাশে বাঁশ ও সুতা দিয়ে বানানো মাচা। ওই মাচায় ঝুলছে সারি সারি শসা। ছোট-বড় হাজারো ঘেরে এভাবেই শসার আবাদ করা হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে শসার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। আর উৎপাদিত শসার মান ভালো হওয়ায় বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাড়িডাঙ্গা বিল ঘিরে অন্তত ১ হাজার পরিবার শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, পাশের আগদিয়ারচর, বিছালী খলশেখালী, মির্জাপুর, নলদিরচরসহ আশপাশের গ্রামগুলোর ২ হাজারেরও বেশি পরিবার শসার আবাদে লাভবান হচ্ছেন।শসা চাষি দিপংকর বিশ্বাস বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে ঘের খনন করে মাছ চাষ করেছি। আর ঘেরের পাড়ে দুই পাশে শসার আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি। আশা করছি মৌসুম শেষে ২ লাখ টাকার শসা বিক্রি করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘শসার পাইকারি দাম যদি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হতো তাহলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। তবে আমাদের উৎপাদিত শসা ব্যাপারীরা জেলার বাইরে বিক্রি করে বেশি লাভ করছেন।’
অন্য চাষি মনোজ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা শসাগুলো পাইকারি বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। প্রতিদিন সকালে শসা তুলে এনে ভ্যানে করে বর্নি বাজারে বিক্রি করি। বাজারে দাম থাকে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। যদি আমরা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারতাম তাহলে এলাকায় শসার আবাদ আরও বৃদ্ধি পেত।’
তিনি জানান, বিছালী ইউনিয়নের বর্নি বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে শসার পাইকারি হাট বসে। চাষিরা ভ্যান, নসিমন কিংবা অটোরিকশা করে শসা নিয়ে আসেন। এখান থেকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় যায় শসা।স্থানীয় ইউপি সদস্য উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘নড়াইলের হাড়িডাঙ্গা বিলের হাজারো পরিবার ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। অনেকে বাড়ি, গাড়ি, জমি কিনেছেন। শুধু আগদিয়া গ্রাম নয়, নলদিরচর, বিছালী, মির্জাপুর, আড়পাড়াসহ অন্তত ১ হাজার পরিবার শসা চাষ করছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ মৌসুমে নড়াইলে ২০২ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর, কালিয়া উপজেলায় ৭৫ হেক্টর এবং লোহাগড়া উপজেলায় ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। চলতি মৌসুমে শসা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৫ টন।সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘শসার চাষ দিন দিন বেড়ে চলেছে। সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর, বিছালী, কলোড়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠের ঘেরে এখন শসার আবাদ হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার পরিবার ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার উৎপাদিত শসা জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘জেলায় ২০২ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৫ টন। চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
নড়াইলের হাড়িডাঙ্গা বিল ও আশপাশের গ্রামগুলোতে শসা চাষ এখন শুধু পারিবারিক আয়ের উৎস নয়। বরং একটি সম্ভাবনাময় কৃষি খাত। স্থানীয়রা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে শসার আবাদ আরও সম্প্রসারিত হবে।