X

নিম্ন আয়ের মানুষের ১০০ টাকার মধ্যে ওষুধে খরচ ২০

উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলছে। নিম্ন আয়ের মানুষের সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে নিচের দিক থেকে আয় করা ৪০ শতাংশ মানুষের ওষুধ সংক্রান্ত গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় হলে ২০ টাকা চলে যায় ওষুধ কিনতে। আর স্বাস্থ্যজনিত সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ক্যান্সার এবং কিডনি রোগে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে শেরাটন হোটেলে বেসরকারি সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) আয়োজিত ‘দি ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অব এলডিসি গ্রাজুয়েশন অন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশন ফর ড্রাগ প্রাইসেস ইন দি লোকাল মার্কেট’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা তুলে ধরেন র‍্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।

র‍্যাপিড চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষের ওষুধ এবং স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামগ্রিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। যা বিশ্বব্যাপী একই খাতে গড় ব্যয়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান তিনি, মানুষের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ার পেছনে বড় কারণ হলো গড় হিসাবে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে কমপক্ষে একজন ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগী রয়েছে। এ দুটো রোগের খরচ সাধারণত বেশি থাকে।

ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর দেশের ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের দান বেড়ে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পরিবারের ওপর পড়বে। এতে দারিদ্র্য বেড়ে যাবে এমন শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি অর্থায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে গ্রাজুয়েশনের পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিটিও) শর্তের কারণে ওষুধ পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা থাকবে না। এতে ওষুধ খাত থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ রপ্তানি আয় কমে যাবে। তবে এ খাতের বৈদেশিক আয় দেশের মোট রপ্তানি আয়ের তুলনায় একেবারে কম হওয়ায় অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে গ্র্যাজুয়েশনের পর অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডেন্টস (এপিআই) ৯৫ শতাংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদন হবে। যা এ খাতের স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত ঘটা থেকে সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

র‍্যাপিড চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ২০২৬ সালের নভেম্বরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু পণ্যের প্যাটেন-ফ্রি সময় বাড়তি তিন বছর বহাল থাকবে। এসময় দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন এলডিসি উত্তর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সুযোগ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনে এপিআই আমদানি কমাতে হবে। যা স্থানীয়ভাবে ওষুধ উৎপাদনে সহায়তা করবে। একটা সময় পরে বিশ্ববাজারের বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং এ খাতের বৈদেশিক আয় বেড়ে যাবে। সবকিছু পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ী করা সম্ভব হলে দেশে ওষুধের দাম না বেড়ে অপরিবর্তিত থাকবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি র‍্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাকের সঞ্চালনায় এক অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান দাবি করেছিলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তীতে আমাদের বেশ কিছু ওষুধের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। এর মধ্যে ইনসুলিনসহ নতুন নতুন রোগের ওষুধ তৈরিতে আট গুণ পর্যন্ত খরচ বেড়ে যাবে। একই অনুষ্ঠানে সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্তে সুযোগ ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে ওষুধের ক্ষেত্রে থাকবে না। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে ৬৬ শতাংশ সুবিধা নাও থাকতে পারে।

জিএসকে বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মাসুদ খান প্যানেল বক্তা হিসেবে বলেন, ওষুধের প্যাটেন্ট এবং ফার্মাসিউটিক্যাল যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে ইয়াসির সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা প্রমুখ।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings