X

নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সিগারেট বিক্রি, ৫০০০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি!

তামাক কোম্পানির কারসাজিতে খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানি কর্তৃক খুচরা বিক্রেতাদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। এমনকি তামাক কোম্পানি খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম সংবলিত বিজ্ঞাপন সরবরাহ করেছে যে দাম মোড়কে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) চেয়ে অনেক বেশি।

এভাবে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে কোম্পানিগুলো প্রায় ৫০০০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের নানা কূটকৌশলের কারণে তামাকের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমানো যাচ্ছে না। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে অতি দ্রুত এমআরপিতে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে।

রাজধানীর সিরডাপের মিলনায়তনে বুধবার ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ভাইটাল স্ট্রাটিজিস’র হেড অব প্রোগ্রাম ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা। স্বাগত বক্তৃতা করেন বিএনটিটিপির সচিবালয় ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসাবে বক্তৃতা করেন- জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, টোব্যাকো ফ্রি কিডস’র লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির চেয়ারম্যান ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৩ কোটি ১৭ লাখ শলাকা সিগারেট বিক্রি হয়। তামাক কোম্পানি প্রতি শলাকা সিগারেট ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি দামে বিক্রি করে। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা এবং মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। অতিরিক্ত এ মূল্যের কোনো রাজস্ব পায় না সরকার। ফলে এমআরপিতে যাতে সিগারেট বিক্রি হয় সেটা এনবিআর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তারা আরও বলেন, বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বিএটিবির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের সচিবদের নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। তামাক কোম্পানি যাতে কোনোভাবেই তাদের ব্যবহার করে সরকারের নীতিতে প্রভাব ফেলতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানে সরকারের যে শেয়ার রয়েছে সেটাও দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।

তারা আরও বলেন, সরকার সম্প্রতি যে হারে সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করেছে সেটা জনস্বাস্থ্য ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে নতুন অধ্যাদেশে সিগারেটের সঙ্গে ধোঁয়াহীন তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করার প্রয়োজন ছিল। আশা করি সরকার সেটা আসন্ন বাজেটে আমলে নেবে।

এ সময় তারা তামাকের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে অ্যাডভেলরেম পদ্ধতি বাতিল করে তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। একইসঙ্গে তামাক কর প্রস্তাব থেকে তদূর্ধ্ব শব্দের ব্যবহার বাতিল, সিগারেট উৎপাদনের তারিখসহ ব্যান্ডরোল ও স্ট্যাম্পে কিউআর কোর্ডের ব্যবহার, রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবি জানান।

সভায় এনবিআর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, এনআইএলজি ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings