X

“নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় শিল্প খাতের বিনিয়োগকারীরা”

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু। শিল্প খাতে গ্যাস সংকট, নতুন বিনিয়োগ বন্ধসহ নানামুখী সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। রপ্তানিমুখী শিল্পের অগ্রযাত্রায় করণীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীবুল হাসান।

প্রশ্ন : গত কয়েক মাসে বেশ কিছু শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন।

শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে কেন?

উত্তর : বায়ার না পাওয়া, আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু মালিক পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর এসব সমস্যার কারণে লাস্ট কয়েক মাসে শিল্পাঞ্চল গাজীপুর, সাভার ও নায়ারণগঞ্জে ৯৫টি শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া গ্যাস সংকটে উৎপাদনের গতি কিছুটা কমেছে।

একজন শ্রমিক বেকার; শুধু একজন শ্রমিক না, এর পেছুনে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও সমস্যার মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত, বাইরে থেকে যে শক্তিগুলো কাজ করে এই শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়া।
প্রশ্ন : শিল্প-কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে আপনি কী দেখছেন, আর দেশে বড় ধরনের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না?

উত্তর : দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে মাত্র আট-৯ মাস হলো, কিন্তু শিল্পের এমন দুর্দিন চলছে ১৭ বছর ধরেই। নারায়ণগঞ্জে ওয়ান অব দ্য বিগেস্ট ইপিজেড হচ্ছিল জাপান সরকারের অর্থায়নে।

এর কাজও বর্তমানে বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। একটা মহল চিন্তা করছে, এখন বিনিয়োগ বন্ধ রাখি। নির্বাচিত সরকার এলে বিনিয়োগ করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে খুব দ্রুত একটি নির্বাচন দিয়ে দেশে নির্বাচিত সরকার আসতে সহযোগিতা করা; তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হওয়ার পাশাপাশি শিল্পে বিনিয়োগ ফিরবে।

প্রশ্ন : যাঁরা এত দিন শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছিলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরা থেমে গেলেন কি না?

উত্তর : আসলে দেশের অর্থনীতি কতটুকু শক্তিশালী, এটার বেশির ভাগই নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি জনগণের আস্থায় ফিরে আসেনি। বিদেশি বায়াররা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নজরে রাখছেন। তাঁরা এখনো এ দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে এই সংকট কাটবে না।

প্রশ্ন : বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের দাবি-দাওয়া পূরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?

উত্তর : সরকার কিন্তু একবারও খোঁজ নিচ্ছে না যে শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতি মাসে শিল্প-কারখানা মালিকদের কত হাজার কোটি টাকা বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। তাঁরা কিভাবে এটার জোগান দিচ্ছেন, সেটাও জানার প্রয়োজন মনে করে না সরকার। সরকারের উচিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া। আর প্রতিবছর ঈদ এলে আমরা দেখি শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ ক্ষেত্রে মালিকরা একেবারেই অসহায়; কারণ বাইরের দেশের বিনিয়োগ খুব কম। ফলে কারখানা চালানোর খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন : বিভিন্ন সময় শোনা যায়, শিল্পে অস্থিরতা দেখিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে অর্ডার ও বিনিয়োগ তাদের দেশে নিয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?

উত্তর : এটা আসলে আমি মানতে রাজি না। দেখেন বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক আছেন তাঁরা অন্য দেশগুলোর শ্রমিকদের চেয়ে অনেক দক্ষ, আবার বিভিন্ন কল-কারখানায় এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগছে। এটা সত্য, ক্রয়াদেশ আনতে আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতিযোগিতা করে থাকি। আমরা একেবারে সামান্য প্রফিট করে বায়ারদের চাহিদা পূরণ করি। আবার আমাদের শ্রমিক ভাইদের কাজের দক্ষতা থাকায় বায়াররা সন্তুষ্ট। এখন সরকারের উচিত বায়ারদের ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।

প্রশ্ন : ব্যবসা করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

উত্তর : দেশে সিন্ডিকেট নেই এমন কোনো সেক্টর নেই। শুধু এই অসাধুচক্রের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। বিভিন্ন সময় গার্মেন্টশিল্পে অস্থিরতা তৈরি হয়, এটা মূলত এক শ্রেণির সিন্ডিকেটের কারণে।

প্রশ্ন : দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

উত্তর : দেশে একটি নির্বাচিত সরকার না এলে শিল্পের এই সংকট দূর হবে না। আমি বলছি না, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তারাও তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই পরবর্তী সরকার আসার অপেক্ষায় আছেন বলে আমি মনে করি।

 

প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জবাসী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্পনগরী। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জীবিকার তাগিদে বসবাস করেন। আমি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত হই এই ভেবে, যখন দেখি সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। আমি মনে-প্রাণে চাইব, সরকার যেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে পরিকল্পিত ভূমিকা রাখে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings