X

পতন থামানোর উদ্যোগ নেই, হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে দরপতন যেন থামছেই না। চলতি সপ্তাহে চার কার্যদিবসের প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হয়েছে। এই চার দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৫ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি কমেছে। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার এ সূচকটি কমেছে ৫৮ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টানা দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রতিদিনই বাজারে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। লোকসান কমাতে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে। তাতে একদিকে কমছে শেয়ারের দাম অন্যদিকে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩০৭ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯৩টি বা ৭৪ শতাংশেরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৫৩টির বা প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির বা প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম।

ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির। বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনই বাজারে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকার বাজারে গতকাল যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার কারণে সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে, সেগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও লাফার্জহোলসিম। এই পাঁচ কোম্পানির দরপতনে সম্মিলিতভাবে ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে ২৩ পয়েন্ট।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, বাজারে ছোট, মাঝারি ও বড় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের হতাশা ভর করেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে কেউ বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। উল্টো অনেকে লোকসান মেনে নিয়ে শেয়ার বিক্রি করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে বাজারের পতন থামাতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়ছে। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যাঁরা নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছিলেন, তাঁরাও এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

এদিকে টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমে গতকাল দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে। সরকার বদলের পর এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টে ছিল। সেখান থেকে কয়েক দিনের উত্থানে তা ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। এরপর পতন শুরু হলে আড়াই মাসে প্রায় সাড়ে ৭০০ পয়েন্ট কমে গেছে। তাতেই হতাশা ভর করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

এনটিসির অনিয়ম তদন্তে কমিটি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) নতুন শেয়ার ইস্যু নিয়ে তুঘলকি কাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বুধবার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

এনটিসির প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ঘটেছে কি না, কোম্পানিতে সরকারি মালিকানার অংশ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানসহ বেশ কিছু বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক রাকিবুর রহমানকে। অপর দুই সদস্য হলেন সংস্থাটির উপপরিচালক বনি ইয়ামিন খান ও সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়।

তদন্ত কমিটিকে আটটি বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরে কোম্পানিতে সরকারি মালিকানার অংশ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বা সরকারের শেয়ার নতুন শেয়ারধারীদের মধ্যে বিক্রি বা হস্তান্তরের ফলে কোম্পানির মূলধনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, নতুন শেয়ার ইস্যু ও সংগৃহীত অর্থের ব্যবহারের উদ্দেশ্য, প্লেসমেন্টে নতুন শেয়ার ইস্যু ও কী পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে, সেই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ, প্লেসমেন্ট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণের সময় বৃদ্ধির আবেদনের পরও কী কারণে কিছু ব্যক্তির মধ্যে নতুন শেয়ার ইস্যু করা হলো তার কারণ অনুসন্ধান, গত তিন বছরে কোম্পানিটির ঋণ পরিস্থিতি ও ক্রমাগত লোকসানের কারণ অনুসন্ধান। এ ছাড়া গত ২৮ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দরবৃদ্ধির কারণ এবং প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে বিএসইসির পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে কি না, তা–ও তদন্ত কমিটিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

এদিকে বিএসইসির গতকালের কমিশন সভায় এনটিসির প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মেয়াদ শর্ত সাপেক্ষে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ৩১ মার্চের মধ্যে প্লেসমেন্ট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সময় বৃদ্ধির অনুমোদনের শর্তের মধ্যে রয়েছে কোম্পানিতে সরকারি মালিকানার অংশ ৫১ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings