X

পবিত্র রমজান: ত্যাগ, সাধনা এবং আত্মশুদ্ধির মাস

কয়েক দিনের মধ্যেই উদয় হতে চলেছে পবিত্র রমজানের চাঁদ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি এক অনন্য মাস, যা বছরের সবচেয়ে বরকতময়, রহমতপূর্ণ ও মাগফিরাতের সুযোগ নিয়ে আসে। রমজান মাস হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ মৌসুম। এটি কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাসও। এ মাসে মানবজীবনকে শুধরে নেয়া এবং আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের সুযোগ থাকে।

কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, “হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।” (সুরা আল-বাকারাহ, ১৮৩)। এই আয়াতে স্পষ্টভাবে রোজার উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে—মানুষের মধ্যে পরহেজগারি বা আল্লাহর ভীতি সৃষ্টি করা।
এছাড়া আল্লাহতায়ালা বলেন, “রমজান মাস, যাতে অবতীর্ণ করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ।” (সুরা আল-বাকারাহ, ১৮৫)। অর্থাৎ, রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে, এ মাসের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় এবং মুসলমানরা রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করেন।
রমজান হলো আত্মশুদ্ধি এবং নৈতিক পরিশুদ্ধির মাস। এই মাসে মুসলমানরা পানাহার থেকে বিরত থাকে, নিজেদের শারীরিক চাহিদাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে নিজেদের নিবেদিত করে। এতে তাদের মধ্যে এক নতুন আধ্যাত্মিক বোধ সৃষ্টি হয়, যা তাদেরকে অন্যায়, অবিচার এবং কুপ্রবৃত্তির প্রভাব থেকে মুক্ত করে।

রমজানের ফজিলত এবং নবী (সা.)-এর সুন্নত
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “এটা রমজান মাস, যা তোমাদের মাঝে আগমন করেছে। এ মাসে জান্নাতের ফটকগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানগুলোকে শিকল লাগানো হয়।” (বুখারি, হা. ১৮৯৯, মুসলিম, হা. ১০৭৯)। অর্থাৎ, রমজান মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল রহমত এবং শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তির সুযোগ রয়েছে।
আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজাগুলো রাখে, তার পেছনের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বোখারি-১৯০১, মুসলিম-২৫৯)।

রমজান মাসে ইফতার এবং সাহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাহরি খাওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত এবং এতে বরকত রয়েছে। সামান্য পানি পান করলেও সাহরির সুন্নত আদায় হয়। ইফতার করার সময় বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ মুহূর্ত: একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়।” (বুখারি, হা. ১৯০৪, মুসলিম, হা. ১১৫১)।

রমজান মাসে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের আগে থেকেই আমাদের ইবাদত এবং নৈতিক জীবনযাত্রা উন্নত করার জন্য মনোযোগী হওয়া উচিত। মহানবী (সা.) রমজানের কয়েক মাস আগেই রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। তাই, রমজান শুরু হওয়ার আগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে নামাজ, দান-সদকা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া উচিত।

রমজান আমাদের জন্য এক অনন্য সুযোগ, যেখানে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। রমজান মাসে আমাদের উচিত, সকল প্রকার পাপাচার থেকে বর্জন করা, পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করা এবং সর্বোচ্চ ইবাদত করে আল্লাহর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করা। মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে আমাদের জীবন গড়ার চেষ্টা করতে হবে।

Categories: ধর্ম
Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings