X

পর্বতসম খেলাপি ঋণ, আদায়ে কঠোর হতে হবে

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতের নানামুখী সংকট কতটা তীব্র আকার ধারণ করছে, তা বহুল আলোচিত। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। আগে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে কমিয়ে দেখানো হতো। এখন সব তথ্য প্রকাশের চেষ্টা চলছে। এতে দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা এর চেয়েও বেশি। পুরো তথ্য সামনে এলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেছেন, ব্যাংকগুলোয় অডিট হচ্ছে, প্রকৃত খেলাপির তথ্য পেলে তা জানানো হবে।

জানা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি হচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ছে; ডিসেম্বরের হিসাব চূড়ান্ত হলে এ হার আরও বাড়তে পারে। এদিকে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের অঙ্ক প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায়। ২০২৪ সালে ৩ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সব মিলে ৯ মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতের ঝুঁকি নিরূপণে নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও জানা যায়, খেলাপি ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে আর ছাড় দেওয়া হবে না। গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বা ব্যক্তিবিশেষ বিবেচনায় যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ নতুন করে বাড়ানো হবে না। এছাড়া পর্যায়ক্রমে আগে দেওয়া ছাড়ের নীতিমালাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। খেলাপিদের ছাড় দিতে গিয়ে যেসব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থাও প্রকট। দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

খেলাপি ঋণ সৃষ্টির প্রবণতা প্রতিরোধে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনকালে বন্ধকীযোগ্য সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন। পর্বতসম খেলাপি ঋণের আকার থেকেই স্পষ্ট অতীতে ঋণপ্রস্তাব অনুমোদনকালে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যেহেতু খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings