X

পাহাড়ে রামবুটান ফল চাষে মান্নানের সাফল্য

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আকবরপুর গ্রামে এক পাহাড়ি টিলার জমিতে বিদেশি ফল রামবুটান চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন এক উদ্যোগী চাষি। চায়ের জন্য খ্যাত এই জেলায় এবার পাহাড়ি টিলায় লালচে হলুদ রঙের চোখজুড়ানো এই ফল ঝুলছে সারি সারি গাছে।চাষি আবদুল মান্নান আকবরপুরে গড়ে তুলেছেন এক ব্যতিক্রমী ফলবাগান। এখানে রামবুটানের পাশাপাশি আছে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের ফলের গাছ। সবুজ টিলার ঢাল বেয়ে সাজানো এই বাগান এখন কেবল ফলের সরবরাহই দিচ্ছে না, মানুষের আগ্রহও টানছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে রামবুটানের গাছে ফলের সমারোহ। ডালভর্তি লালচে ও হলুদ রঙের ফল ঝুলছে সারি ধরে। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমনি সুস্বাদু।

চাষি মান্নান জানান, চার বছর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রামবুটানের চারা সংগ্রহ করেন। রোপণের এক বছরের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে। তার ভাষায়, ‘গত বছর প্রায় ১০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। এবার আশা করছি আরও বেশি বিক্রি হবে।’

বাগানে বর্তমানে ২৫টি রামবুটানের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি গাছে ফল ধরেছে। মান্নান বলেন, ‘ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও দারুণ। এলাকায় এটা একেবারেই নতুন। ফলে বাজারে নিতে হয় না, পরিচিত মানুষরাই বাগান থেকে কিনে নিয়ে যায়।’

এই ফল লিচু পরিবারের। আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি। পাকা ফল লাল, কমলা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। খোসায় শত শত কোমল চুলের মতো আঁশ থাকে। যেটা দেখতে অনেকটা কদমফুলের মতো। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া বিদেশি ফলগুলোর মধ্যে রামবুটান অন্যতম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রামবুটানের আদি উৎস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এখন এটি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও কয়েক বছর ধরে এটি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

মান্নানের ৫ একর ৪৪ শতক জমির বাগানে রয়েছে প্রায় ৯০০ আমগাছ। এ বছর তিনি আম বিক্রি করেছেন ৫৫ হাজার টাকার। কাঁঠাল গাছ রয়েছে ১০০টি, যার থেকে বিক্রি হয়েছে আরও ৫৫ হাজার টাকার ফল। বাগানে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার আনারস গাছ, যা থেকে এবার আয় হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া রয়েছে ৫৫টি লিচু গাছ, ১৫টি জামগাছ ও ১৩টি পিনাট বাটার গাছ। রয়েছে লাল কলা, দার্জিলিং মাল্টা ও বিদেশি কমলার গাছ। ড্রাগনের চাষও হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়েছে। ফল পাকতে থাকায় ধাপে ধাপে আরও বিক্রি হচ্ছে।

বাগানে ছয়জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। মান্নান বলেন, ‘বছরে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে এখন ২ লাখ টাকার মতো লাভ থাকে। যত দিন যাবে ফলন বাড়বে, বিক্রিও বাড়বে। আগামী বছর ফলন দ্বিগুণ হবে আশা করি।’

ফল দেখতে বাগানে গিয়েছিলেন শহরের আমীর মিয়া ও সুমন দাস। তারা বলেন, ‘বিদেশি ফল রামবুটান দেখতেই এসেছি। এর স্বাদ অনন্য। আগে চিনতাম না, এবার কিনলাম ৬ কেজি, ৫০০ টাকা কেজি দরে।’

স্থানীয় বাসিন্দা অর্জুন বেনবংশী বলেন, ‘বাগান দেখতে এখন অনেকেই আসছেন। আমিও আগামী মৌসুমে রামবুটান চাষ শুরু করব। চাই এই ফল এলাকার আরও চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।’ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নীরোজ কান্তি রায় বলেন, ‘মান্নানের বাগানে দেশি-বিদেশি অনেক ফলের চাষ হচ্ছে। এটি সম্ভাবনাময় একটি ফলবাগান।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ‘মৌলভীবাজারে বাণিজ্যিকভাবে রামবুটান চাষ করেছেন প্রথম মান্নান। আমরা চাই এই ফল জেলায় আরও বিস্তৃত হোক। মানুষের কাছে এর পরিচিতি বাড়ানো ও আগ্রহীদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার।’

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings