চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে ব্যাংকটি ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি। ব্যাংকিং খাতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।
একক ভিত্তিতে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকায়, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালেন্স শিটে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও অনেক বেশি। এ সময় ব্যাংকটি এককভাবে গ্রাহক আমানতে ৩৪ শতাংশ এবং ঋণে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ব্যাংকটি থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ব্র্যাক ব্যাংক সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির সমন্বিত কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।সম্প্রতি এক আর্নিংস ডিসক্লোজার সেশনে ব্যাংকটির ২০২৪ অর্থবছর ও ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক ও পরিচালনগত সাফল্য প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (চলতি দায়িত্ব) তারেক রেফাত উল্লাহ খান এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাংকটির আর্থিক ও পরিচালনগত সাফল্য এবং সক্ষমতা উপস্থাপন করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও তুলে ধরেন।
জানা গেছে, সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের ৪ দশমিক ৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ৬ দশমিক ৯৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) আগের বছরের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ দশমিক ১১ টাকায় উন্নীত হয়েছে। শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২০২৩ সালের ৩৭ দশমিক শূন্য ৫ টাকার তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯১ টাকায়।বলা হয়েছে, ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও বেড়েছে ২০ শতাংশ, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকটির গ্রাহক আমানত (একক) ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ। সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৫১ শতাংশতে। ঋণ প্রবৃদ্ধি, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং বেশি নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে ইন্টারেস্ট আয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত আয় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের ফলে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারির ওপর জোর দেওয়ার ফলে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২০২৩ সালের ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২ শতাংশ ৬৩ শতাংশ হয়েছে।
২০২৫-এর প্রথম প্রান্তিক
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বৃদ্ধি পেয়ে ২ দশমিক ২৭ টাকা হয়েছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৫৪ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২৫-এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) বেড়ে ৪৭ দশমিক শূন্য ৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪৪ দশমিক ১১ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের মোট আমানত (একক) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকটির দীর্ঘমেয়াদি কৌশল এবং গ্রাহক আস্থার প্রতিফলন। সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৪৪ শতাংশতে। ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিত মোট রেভেনিউ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূলে রয়েছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সুদ আয়ের সাথে নন-ফান্ডেড আয় বৃদ্ধি। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের (এনপিএল) হার সামান্য বেড়ে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের এই লক্ষণীয় সাফল্য আমাদের গ্রাহক, সমাজ এবং দেশের প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা উদ্ভাবন, ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’তিনি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক এখন এক আস্থার নাম। করপোরেট সুশাসন, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধ-নির্ভর ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রোল-মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এমন অর্জনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের প্রতি- তাদের ধারাবাহিক দিকনির্দেশনার জন্য; বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি- তাদের রেগুলেটরি দিকনির্দেশনার জন্য এবং আমাদের গ্রাহকদের প্রতি- ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য।’
