X

‘প্রেস্টিজিয়াস’ চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা

আলেয়া’স বেকারির ওনার আলেয়া আক্তারী। কাজ করছেন বিভিন্ন ধরনের কেক, স্যান্ডউইচ, পিজ্জা, বান, রোল, সামুচা, আচারসহ দেশী-বিদেশী নানা ধরনের খাবার নিয়ে। ঘরে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরী এসব খাবার এখন শোভা পাচ্ছে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন লোকজনের বাসায় বিকেলের নাস্তার টেবিলে, অফিসের কোন আয়োজনে বা বন্ধু-বান্ধব মহলের জন্মদিনসহ নানা আনন্দ আয়োজনে।

আলেয়া’স বেকারিতে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা মূল্যের রোল, ১,২০০ টাকা পাউন্ড কেকসহ বিভিন্ন দামের লোভনীয় সব খাবার পাবেন ক্রেতারা। কিছুদিন পর-পরই মেনুতে যুক্ত হচ্ছে নতুন খাবার। স্বল্প সময়ে এই উদ্যোক্তার ৮০ শতাংশই রিপিট ক্রেতা। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেগুলার ও নতুন ক্রেতার সংখ্যাও। প্রতি মাসে এখন এই উদ্যোগ হতে খরচ সহ ৬০,০০০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। উদ্যোগ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ৭ জন লোকের কর্মসংস্থান।

উদ্যোক্তা বলেন ‘আমি ২০২০ সালের নভেম্বরের ১ তারিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ চালুর মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে আসি। তবে তার আগে দুই বছর ঢাকায় ওয়েলফেয়ার অফিসার হিসেবে নাসা গ্রুপে চাকরি করেছি। পরবর্তীতে বৈবাহিক কারণে স্বামীর চাকরির সুবাদে শিক্ষানগরী রাজশাহীতে চলে আসি চাকরি ছেড়ে। সংসার, বাচ্চাদের দেখভাল সব কিছুই ভালো চলছিলো তবে মনে একটা আক্ষেপ বরাবরই চলতো আমার ‘প্রেস্টিজিয়াস চাকরি করতাম এখন বেকার সময় কাটাচ্ছি।’ সংসারের কাজের মাঝে বারবার কথাগুলো স্মরণ হয়ে ভাবিয়ে তুলতো আমায়। এভাবে চলতে-চলতে ২০১৬ সালে শখের বশে এবং বাচ্চাদের নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য বেকিং প্রশিক্ষণ নিলাম। পরবর্তীতে আমার কেকসহ অন্যান্য খাবার খাওয়ার পর যখন সকলে প্রশংসা করতেন, সে সময় আমার ইচ্ছে হয় আমি যদি এগুলো অন্যদের মাঝে সরবরাহ করতে পারতাম! তবে ছোট বাচ্চা থাকায় ওই সময় শুরু করতে পারিনি।’

পরবর্তীতে ২০২০ এর নভেম্বরে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় আলেয়ার। বেকার নামটি মুছে আবারো নিজেকে নতুন রূপে গড়ার যুদ্ধে সামিল হোন এই উদ্যোক্তা। শুরু থেকেই পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন স্বামী ফরিদ মোহাম্মদ শামীম এবং সন্তানরা। মায়ের ব্যস্ততা বাড়লে তারাও যথাসাধ্য চেষ্টা করে মাকে সহযোগিতা করতে।

বেভারেজ, বেকারি এবং প্যাটিসারি, ফুড আর্ট এবং প্রেজেন্টেশন, এশিয়ান কুইজিন, আইসিআই ফাস্ট ফুড, কন্টিনেন্টাল এবং মেক্স-তালিয়া, ইন্দো-বাংলা মুঘল এবং অ্যারাবিয়ান কুইজিনসহ আই সি আই থেকে অনলাইনে বেশ কিছু কোর্স সম্পন্ন করেন এই উদ্যোক্তা। এছাড়াও ইউ কে সার্টিফাইড এবং এক্রিডেটেড ৩ মাস মেয়াদি প্রফেশনাল কেক বেকিং এন্ড ডেকোরেটিং ডিপ্লোমা কোর্স করেন তিনি। তার বাইরে অনলাইন, অফলাইনে অসংখ্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আলেয়ার। শেষ করেছেন লেভেল ওয়ান এবং ফোর। খুব শীঘ্রই লেভেল টু শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি।

২০২২ এ মার্কস ডেজার্ট এ আঞ্চলিক পর্যায় হতে চতুর্থ হয়েছিলেন আলেয়া। গত ৪ নভেম্বর রয়েল বেঙ্গল মাস্টার শেফ অর্গানাইজেশন (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) আন্তর্জাতিক সোনার বাংলা লাইভ রান্না প্রতিযোগিতায় সেরা ১০-এ ছিলেন আলেয়া’স বেকারির স্বত্বাধিকারী। সকলের ভালোবাসা এবং চাওয়াতে গত চার-পাঁচ মাস ধরে তিনি নতুনদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার ২৫ জন শিক্ষার্থী কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন বৃহৎ পরিসরে স্টুডেন্টদের শেখাতে পারবেন তিনি। আর তাই ট্রেইনার এবং অ্যাসোসর হওয়ার লক্ষ্যে লেভেল গুলো ধীরে- ধীরে শেষ করছেন। শুধু তাই নয়, তার তৈরী খাবার নিয়ে থাকবে ভিন্ন রকম একটি শপ। আর এই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন উদ্যোক্তা আলেয়া আক্তারী।

রাজশাহী উইমেন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক হিসেবেও রয়েছেন আলেয়া।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings