X

ওয়ান টাইম কাপে চা, কফি খেয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন না তো?

প্লাস্টিক পণ্য যেভাবে আমাদের জীবনধারার অংশ হয়ে গেছে, তাতে এসব পণ্য ছাড়া জীবন কল্পনা করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে, পানিতে। খাবারের মাধ্যমেও প্লাস্টিক কণা ঢুকে পড়তে পারে আমাদের শরীরে। প্লাস্টিকজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। রোজকার জীবনে ছোটখাটো কিছু বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।

প্লাস্টিকের কণা কেন ক্ষতিকর

প্লাস্টিক কণার প্রভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মানবদেহ। হতে পারে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হরমোনের সমস্যা। শিশুদের বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গর্ভের শিশুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণও হতে পারে প্লাস্টিক কণা। তবে রোজকার জীবনে টেকসই, পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করলে এবং প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সীমিত করে ফেলতে পারলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব।

প্লাস্টিক কণার প্রভাব ও ক্ষতি থেকে বাঁচার নানা উপায় সম্পর্কে বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশে প্লাস্টিক বহু বছর ধরে রয়ে যায়। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। মাটি বা পানিতে রয়ে যাওয়া প্লাস্টিকের প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। বাস্তুতন্ত্রের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। যতটুকু ব্যবহার না করলেই নয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার ততটুকুতেই সীমিত রাখতে চেষ্টা করুন। ব্যবহার করতে হলেও ভালো মানের প্লাস্টিক বেছে নিন। মেনে চলুন এর ব্যবহারবিধি। আর খুঁজে নিন পরিবেশবান্ধব বিকল্প।’

তা ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করার প্রতিও গুরুত্ব দিলেন এই চিকিৎসক। রোজকার জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক।

শিশুর জন্য

১. শিশুর জন্য প্লাস্টিকের বোতল বেছে নেবেন না। নিতান্তই প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হলেও তাতে গরম দুধ ঢালবেন না। গরম পানিতে প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার করা হলে এরপর বারবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন।
২. ডায়াপারের ব্যবহার সীমিত রাখুন। প্রয়োজনে কাপড়ের ডায়াপার বেছে নিন।
৩. ওয়াইপের বদলে সুতি, নরম কাপড় বেছে নিন।
৪. প্লাস্টিকের খেলনা এড়িয়ে চলা ভালো। বিশেষ করে শিশু যেসব খেলনা মুখে দিতে পারে, সেগুলো যাতে প্লাস্টিকের না হয়।

খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্লাস্টিক কণার প্রবেশ কীভাবে রোধ করবেন?

১. প্লাস্টিকের পাত্রে বা প্যাকেটে খাবার না রাখাই ভালো। নিতান্তই রাখতে হলে ‘ফুড গ্রেড’ প্লাস্টিকের বাটি বেছে নিন।

২. প্লাস্টিকের পাত্রে পানি রাখবেন না। কাচের বোতল ব্যবহার করুন। কিংবা এমন বোতল ব্যবহার করুন, যার ভেতরটা ধাতব উপকরণে তৈরি। বিশেষ করে যখন আপনি রোদে যাচ্ছেন, তখন এ বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

৩. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার করবেন না। তরল গ্রহণের জন্য প্রচলিত ‘স্ট্র’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বাঁশের তৈরি ‘ওয়ান টাইম’ চামচ, কাঁটাচামচ, প্লেট, গ্লাস প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারেন।

৪. রেস্তোরাঁয় গিয়েও আগেই বলে দিন, প্লাস্টিকের কোনো পণ্য যাতে আপনাকে না দেওয়া হয়।

৫. প্লাস্টিকের পাত্রে কখনোই গরম খাবার বা গরম পানি রাখবেন না। এসব পাত্র ওভেনে দেবেন না। ‘ওয়ান টাইম কাপ বা গ্লাসে’ চা-কফি খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। গরম তরল নাড়াচাড়া করতে প্লাস্টিকের চামচ ব্যবহার করবেন না। বাইরে গেলেও প্রয়োজনে এগুলোর বিকল্প নিজের কাছে রাখতে পারেন।

৬. রান্নাঘরে প্লাস্টিকের কৌটা ও চামচ না রাখাই ভালো। চপিং বোর্ড, বেকিং ট্রে এবং বেকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ছাঁচ যাতে প্লাস্টিকজাতীয় পণ্যের না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৭. বাজারে যাওয়ার সময় নিজেই একাধিক টেকসই ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। বিক্রেতাকে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ দিতে নিষেধ করে দিন।

৯. স্যান্ডউইচের মতো কোনো খাবার মুড়িয়ে নিতে মোমের পরত (বিস ওয়াক্স র‍্যাপ) কাজে লাগান।

পরিচ্ছন্নতা উপকরণেও আছে প্লাস্টিক

স্যানিটারি ন্যাপকিন, চিরুনি, টুথব্রাশ, ডেন্টাল ফ্লস, ওয়ান টাইম রেজার, ডিওডরেন্টের কৌটা, শ্যাম্পু-কন্ডিশনারের কৌটা, প্লাস্টিকের সাবানদানি—পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যুক্ত নানান উপকরণেও রয়েছে প্লাস্টিক। এসবের বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করুন। এই যেমন পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ন্যাপকিন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ বেছে নেওয়া যায়।

বাঁশের বা কাঠের চিরুনি, ধাতব রেজার, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের বার, ধাতব সাবানদানি প্রভৃতি হতে পারে স্বাস্থ্যকর অনুষঙ্গ। প্রাকৃতিক ব্রিসলযুক্ত, বাঁশের তৈরি টুথব্রাশ বেছে নিন। রেশমের ডেন্টাল ফ্লস বেছে নিতে পারেন। কাচের বোতলের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings