ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুমার নদের পাড় দিয়ে সাড়ে ৬০০ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। ২০২২ সালে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার মাত্র ৩৫০ মিটার সড়ক নির্মাণ করে কাজটি বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে নির্মিত সেই ৩৫০ মিটার সড়ক ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির অবস্থা বেহাল হলেও সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আবার কাজটি শেষ করার আলামত দেখা যাচ্ছে না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এমন বেহাল দশা যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেলা দায়। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক খাল খন্দে ভরে গেলোও বর্তমানে তা পায়ে হেটে চলার ও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছে পথচারীরা। কোন জরুরী অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের সুযোগ নেই এ সড়ক দিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক এহসানুল হক বলেন, তবে দুঃখজনক বিষয় হলো প্রায় তিন বছর আগে এখানে প্রায় সাড়ে ৬’শ মিটার টেন্ডার হয়েছিলো। জুঁঙ্গুরদী খাদ্য গুদাম হতে কুমার নদের পাশ দিয়ে জুঁঙ্গুরদী খালপাড় পর্যন্ত আরসিসি রাস্তার টেন্ডার হয়। ২০২১ সালের ৩ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২৩ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও পুরো কাজ শেষ হয়নি। নির্মিত ৩৫০ মিটার সড়ক ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
এ ব্যাপারে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বাবলু মাতুব্বর বলেন, আমি কাজটি করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয়দের বাড়াবাড়ির কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার হাসিবুল হাসান আব্দুল্লাহ্ বলেন, প্রায় সাড়ে ৬’শ মিটার সড়কের মধ্যে ৩’শ মিটারের মতো কাজ করেছি। পৌরসভা থেকে বিল না দেওয়ায় এবং স্থানীয়রা বার বার কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এটা আমার নিজ এলাকা, আমার ও একটা আবেগ ছিলো, আমি লাভ ক্ষতি হিসাব করিনি। কাজটি ভালোভাবেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। এতে আমি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং স্থানীয়দের দুর্ভোগ ও বেড়েছে।
বাকি কাজ শেষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বকেয়া পরিশোধ করলে আমি পিডি’র (প্রজেক্ট ডিরেক্টর) সাথে যোগাযোগ করে দেখব, যদি সম্ভব হয় তাহলে কাজটি করে দিব। যেহেতু দু’বছর আগে টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়েছে কাজেই আমি চেষ্টা করব কাজটি করার কিন্তু নিশ্চিত বলতে পারছি না।
নগরকান্দা পৌরসভা উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম লুৎফর রহমান রানা বলেন, এবিষয়ে ঠিকাদারকে একটি চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তিনি যদি কাজটি করেন তাঁকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। না করলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, ঠিকাদার রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে কাজে অনিয়ম করেছিলো তাই তাঁর কাজের বিল বন্ধ করা হয়েছিলো তবে যতোটুকু কাজ করেছে তার সমপরিমাণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, এবিষয়ে খুব শীঘ্রই ঠিকাদারকে একটি চিঠি পাঠানো হবে। তিনি কেন কাজটি করেননি তা জানতে চাওয়া হবে। তিনি কাজটি না করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।