বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। বর্তমানে পুরুষদের পাশাপাশি ডায়বেটিসের প্রবণতা বাড়ছে নারীদের মধ্যেও। বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি নারীর রক্তে শর্করার আধিক্য রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব তাই বলছে।
সমীক্ষার রিপোর্টে আরো দেখা গেছে, প্রতি পাঁচ জন কমবয়সি মেয়ের মধ্যে রক্তে বাড়তি শর্করা নিয়ে জীবনযাপন করছেন অন্তত দুজন। এর কারণ অনেক। এক দিকে জীবনযাপনে অসংযম, অন্য দিকে হাই ক্যালোরি ডায়েট, এই দুইয়ের মিলিত ফল বাড়তি ওজন। বাড়ছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের (পিসিও) প্রবণতা। আর পলিসিস্টিক ওভারি চলতে থাকলে টাইপ-টু ডায়াবিটিসের ঝুঁকি ভয়ানক বেড়ে যায়।
গর্ভে সন্তান এলে এই সমস্যা আরো বাড়ে। সমীক্ষা বলছে, কয়েক বছর আগেও ১০০ জন গর্ভবতী মেয়ের মধ্যে বড়জোর চার জনের রক্তে শর্করার বাড়তি মাত্রা পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০ জনে ১০ জন। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে শুরু থেকেই সতর্ক না হলে এক দিকে হবু সন্তানের নানা শারীরিক সমস্যা, এমনকি, গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যুও হতে পারে। তাই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নারীদের কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হবে।
ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে, কী কী নিয়ম মানবেন নারীরা-
সুষম ডায়েট
বাড়ির সকলের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত পান না নারীরা। তবে শুধু তো বাড়ির দায়িত্ব নয়, সঙ্গে অফিসও আছে। চরম ব্যস্ততার মাঝেও শরীরের খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য রোজের ডায়েটে সবুজ শাকসবজি, ফাইবার আছে এমন খাবার রাখতেই হবে। মৌসুমি ফল খেতে হবে রোজ একটি বা দুটি, সেই সঙ্গে প্রোবায়োটিকের জন্য দই খেতেই হবে। কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমিয়ে ওট্স, ডালিয়া বা কিনোয়া খেতে পারেন। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্য মাছ, বিভিন্ন রকম বাদাম রাখতে হবে ডায়েটে।
শরীরচর্চা
নিয়ম করে দিনে আধা ঘণ্টা হাঁটলেই জব্দ হবে ডায়াবেটিস। দৌড়ানো, স্পট জগিং, সাঁতার, এরোবিক্সের মতো ব্যায়াম ওজনও কমাবে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমিয়ে দেবে। জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করা সময় না পেলে ঘরেই অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে যোগাসন শুরু করুন। সারা দিনে ১৫ মিনিট সময় শরীরচর্চার জন্য বরাদ্দ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ধূমপান নয়
ধূমপানের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে, এটা অনেকেরই অজানা। তবে জেনে রাখা উচিত, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের নেপথ্যে ধূমপানও একটি কারণ। ধূমপানের অভ্যাসে রক্তে শর্করা বাড়তে থাকে। এই ডায়াবেটিসের হাত ধরেই কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি, দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ হয়ে যায়।
মানসিক চাপ কমান
মনের উপর চাপ বাড়লেই রক্তে শর্করার মাত্রা দুরন্ত গতিতে বাড়তে শুরু করবে। মানসিক চাপ ও মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা শরীরে হরমোন ক্ষরণকে প্রভাবিত করে। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে তা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
সময়ান্তরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বয়স ৩০ পেরোলেই বছরে অন্তত একবার করে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেয়া জরুরি। সেই সঙ্গে থাইরয়েড পরীক্ষা করা জরুরি। তবে শুধু থাইরয়েড নয়, পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোলেস্টেরলের মাত্রাও ঠিক আছে কি না। সে ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করাতে হবে।