বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল (৪ আগস্ট) যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে, গণতন্ত্র, প্রশাসনিক ন্যায্যতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, মাননীয় উপদেষ্টা, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং ডেপুটি গভর্নর মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী।
🔹 বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
এই অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভূমিকা, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের বিষয়টি গভীর শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জুলাই–আগস্ট বিপ্লবের সাহসী যোদ্ধারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনেকে স্মৃতিচারণে অংশ নিয়ে শহীদদের বীরত্ব, নৈতিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে চার দফা ঐতিহাসিক দাবি উত্থাপন করেন অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ নাজরুল ইসলাম – যিনি ছিলেন প্রথম সরকারি কর্মকর্তা, যিনি ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
🔹 চার দফা ঐতিহাসিক দাবি সংক্ষেপে:
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘স্বায়ত্তশাসন দিবস’ ঘোষণা (৪ আগস্ট):
এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসন দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এটি নীতিগত স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা ও কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
১০ হাজার কোটি টাকার তরুণ উদ্যোক্তা তহবিল গঠন:
তরুণদের আত্মকর্মসংস্থান, স্টার্টআপ, MSME অর্থায়ন ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্যে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
শরিয়াহ ভিত্তিক আগাম সুবিধা চালু:
যেসব কর্মকর্তা ধর্মীয় কারণে প্রচলিত আগাম সুবিধা গ্রহণে অনাগ্রহী, তাদের জন্য শরিয়াহ-সম্মত পণ্য চালুর দাবি জানানো হয়।
জেডি পর্যায়ে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ (কার মেইন্টেন্যান্স) সুবিধা:
সরকারের অন্যান্য দপ্তরের ন্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জেডি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্যও এই সুবিধা চালুর দাবিও পেশ করা হয়।
সভা ও নেতৃত্বের তাৎপর্য:
এই দাবিগুলোর পেছনে রয়েছে প্রশাসনিক ন্যায্যতা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও নীতি স্বাধীনতার স্পষ্ট বার্তা।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বের সমন্বয়ে এই সভাটি হয়ে ওঠে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি গভর্নর মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী।
উপসংহার:
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে একটি পরিবর্তনশীল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই চার দফা দাবি শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কর্মী-বান্ধব কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পথে কার্যকর নির্দেশনা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে ৪ আগস্টের এই আয়োজন একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে