X

বাইরে দূরত্ব ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ বিএনপি-এনসিপির

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। এ নিয়ে দলটির কৌশলগত পদক্ষেপ দৃশ্যমান। নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘চাপে’ রাখা হচ্ছে। ‘ইশরাক হোসেনের শপথ’ ইস্যু বিএনপির শোডাউনও বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক ময়দানে এখন কেন্দ্রীয় ইস্যু ‘জাতীয় নির্বাচন’।
নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের তেমন তোড়জোড় নেই। তবে লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলটির আমিরের বৈঠকের পর আলোচনা ছিল জামায়াতের বিরোধী দলে থাকা নিয়ে। আবার দ্রুত নির্বাচন নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দৃশ্যত কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তবে বাইরে থেকে এনসিপিকে যেমনই দেখা যাক, ভেতরে ভেতরে তাদের পদক্ষেপ বলছে ভিন্ন কথা। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপির নেতারা বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন।
যদিও বাইরে থেকে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির একটা ‘দূরত্ব’ দেখা যাচ্ছে। তারপরও কী বিষয়ে এনসিপির যোগাযোগ? এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, এনসিপির যোগাযোগ বজায় রাখছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই। নির্বাচনের আগে ও পরে এক ধরনের সমঝোতা চায় এনসিপি।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশরাক ইস্যুতে মাঠে নামা বিএনপির একটি কৌশলগত ‘শোডাউন’। তাদের লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিশ্চিত করা। অন্যদিকে এনসিপি এ চাপের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বাড়ানো।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মাঠের শূন্যতা পূরণ করতে পুরনো দলের সঙ্গে নতুন কয়েকটি দল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে পুরনো শক্তির সঙ্গে নতুনদের স্বার্থের বিরোধ হলে সেখানে দ্বন্দ্ব অনস্বীকার্য। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা দেখার জন্য আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এ অবস্থান ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে হবে।

বিএনপির লক্ষ্য দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আদায় : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবি কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ এখন চরম উত্তপ্ত। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে শপথে বিলম্ব এসব মিলিয়ে ইস্যুটি এখন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে এক প্রকার ‘শক্তিমাপের’ প্রতীক হয়ে উঠেছে।

টানা এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান, নগর ভবন ঘেরাও এবং প্রতিবাদ সমাবেশে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। প্রথম দিকে এ আন্দোলনে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেও বর্তমানে ইশরাকের পক্ষে প্রকাশ্য দলীয় সমর্থন দিচ্ছে বিএনপি।

অন্যদিকে, ইসির গেজেট প্রকাশ এবং মেয়র শপথে বিলম্ব কেন্দ্র করে বিএনপিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের মালিক’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা রাজনীতিতে নামে এনসিপি। দলটি দাবি করেছে, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করার প্রক্রিয়াটি ছিল একতরফা এবং এর মাধ্যমে ইসি একটি রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থে কাজ করেছে। এনসিপি এরই মধ্যে ইসির পুনর্গঠন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সংস্কারভিত্তিক নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

এ ইস্যু কেন্দ্র করে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে বিরোধ এখন আরও প্রকাশ্য হয়েছে। এনসিপির মতে, বিএনপি সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজনের তাড়ায় আছে, যা অনাকাক্সিক্ষত। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, এনসিপি নতুন নতুন ইস্যু তুলে নির্বাচনের পথকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নপূরণের জন্য এ দেশের মানুষ অপেক্ষমাণ। কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে, তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন।’

যদিও বৃহস্পতিবার ফেসবুক দেওয়া এক পোস্টে আগের যেকোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল, সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। পুরোনো বন্দোবস্তের বিভেদকামী সেøাগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’

সরকারকে অসহযোগিতার হুঁশিয়ারি বিএনপির : ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জুলাই-ছাত্র অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথা শিগগিরই সম্ভব জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এর অন্যথা জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এ সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’

মানবিক করিডর : মানবিক করিডরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার জানিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকা-ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কি না, সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার। এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের আছে বলে এ দেশের জনগণ মনে করে না। দেশের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত শুধু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।’

উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন জরুরি : বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম
‘নির্বাচন কমিশন নয় বরং উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন জরুরি’ বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ফোরামের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।

সাবেক আমলা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দল ‘এনসিপি’ কর্তৃক বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জনমনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশন সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের মানুষের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন নিয়ে নির্বাচন কমিশন যখন নিবিড়ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, ঠিক তখনই একটি জনবিচ্ছিন্ন ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জনমনে প্রচ- ক্ষোভ ও আক্রোশের জন্ম দিয়েছে।

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings