X

বিদায় হজের ভাষণ বলতে কী বোঝায়?

ইসলামের ইতিহাসে একটি ভাষণ এমন রয়েছে, যা কেবল এক যুগ বা জাতির জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য ন্যায়ের, মানবাধিকারের এবং শান্তির চিরন্তন বার্তা বহন করে। সেটিই হলো বিদায় হজের ভাষণ (Farewell Sermon)। মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ হিজরির ৯ জিলহজ মক্কার নিকটস্থ আরাফাতের ময়দানে এই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ—তাই একে ‘বিদায় হজ’ বলা হয়, আর সেই হজে দেওয়া ভাষণকে বলা হয় বিদায় হজের ভাষণ।

হিজরত ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের শেষে, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হজে গেলেন, তখন তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার সাহাবি। এই ভাষণে তিনি মুসলমানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও মানবতার ভিত্তিভূমি রেখে যান। এটি শুধু ধর্মীয় ভাষণ ছিল না, বরং মানবাধিকারের প্রথম আন্তর্জাতিক ঘোষণা বলা যেতে পারে।

বিদায় হজের ভাষণের মূলবার্তাগুলো হলো-

১. মানবসমতার ঘোষণা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের পিতা এক। কোনো আরবের ওপর অনারবের, কোনো অনারবের ওপর আরবের, কোনো শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের এবং কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে।’

২. নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের নারীদের ওপর তোমাদের অধিকার আছে, আর তোমাদেরও তাদের ওপর কিছু দায়িত্ব আছে। তোমরা তাদের প্রতি সদয় হও।’

৩. রক্তপাত ও প্রতিশোধের নিষেধাজ্ঞা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাহেলিয়াতের প্রতিশোধ নেওয়া ও রক্তপাত আজ থেকে নিষিদ্ধ করা হলো। সব সুদও নিষিদ্ধ করা হলো।’

৪. সম্পদের নিরাপত্তা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের একে অপরের সম্পদ ও জীবন তোমাদের নিকট পবিত্র, যেমন এই দিন, এই মাস, এই শহর পবিত্র।’

৫. কোরআনের অনুসরণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না—তা হলো আল্লাহর কিতাব (কোরআন)।

ইউনেস্কোসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এটিকে ‘ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানবিক ভাষণ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমান সময়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণভিত্তিক বিভাজনের মধ্যে বিদায় হজের ভাষণ একটি গ্লোবাল মেসেজ হতে পারে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা জীবন গড়তে পারি।
বিদায় হজের ভাষণ শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি চিরন্তন বার্তা। বিশ্ব শান্তি, মানবাধিকার এবং নৈতিকতার জন্য এটি একটি অনন্য দিকনির্দেশনা। আমাদের উচিত এই মহান ভাষণের আলোকে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রজীবন গড়ে তোলা।

Categories: ধর্ম
Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings