অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান ও তার স্ত্রী তাহমিদা বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়েছে, তিনি এয়ার চিফ মার্শাল পদে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৫০৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি নিজের ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭০০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। রাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে ওই সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে দুবাই ও কাতারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। কানাডায় তার একমাত্র ছেলে শেখ লাবিব হান্নানসহ আত্মীয়স্বজনের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। প্রাথমিকভাবে এসবের তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তকালে ওই সব সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
তাহমিদা বেগমের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়েছে, তিনি তার স্বামীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় ১ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি নিজের ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৯২৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। মামলাটিতে শেখ আব্দুল হান্নানকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
মামলা দুটিতে বলা হয়, শেখ আব্দুল হান্নান ও তার স্ত্রী তাদের অর্থ-সম্পদের উৎস গোপন করতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন; যা দুদকের তফসিলভুক্ত ১৯৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২১ সালের ১২ জুন এয়ার ভাইস মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান বিমানবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ এয়ার চিফ মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর চাকরির মেয়াদ শেষে গত বছরের ১১ জুন তিনি অবসরে যান। শেখ আব্দুল হান্নান এয়ার চিফ মার্শালের দায়িত্ব পালনের সময় তার স্ত্রী তাহমিদা হান্নান বাংলাদেশ বিমানবাহিনী মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ও বিমানবাহিনী লেডিস ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৫ মে শেখ আব্দুল হান্নান, তার স্ত্রী তাহমিদা ও তাদের ছেলে শেখ লাবিব হান্নানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ৭ মে একই আদালত আরেক আদেশে তাদের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ব্যবসায়িক শেয়ারসহ সব আর্থিক লেনদেন অবরুদ্ধ ঘোষণা করেন। আদেশের ভিত্তিতে শেখ আব্দুল হান্নান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।