প্রতি বছর ২৬ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস । এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যার মাধ্যমে রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং এবং হিট পাম্প প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। আধুনিক জীবনযাত্রায় এই প্রযুক্তিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য সংরক্ষণ, ওষুধ সংরক্ষণ, পরিবেশ রক্ষা ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে রেফ্রিজারেশন এক অনন্য প্রযুক্তি।
এই দিবসটি মূলত ব্রিটিশ প্রকৌশলী লর্ড কেলভিনের জন্মদিন উপলক্ষে উদযাপন করা হয়, যিনি তাপমাত্রা পরিমাপের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের সূচনা হয়। এই দিনের মূল উদ্দেশ্য হলো — রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং প্রযুক্তির সামাজিক, স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত গুরুত্ব তুলে ধরা এবং এই খাতে কাজ করা পেশাজীবীদের প্রতি সম্মান জানানো।
বর্তমানে রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তি শুধু খাদ্য সংরক্ষণের জন্য নয়, চিকিৎসাক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক টিকা এবং ওষুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ছাড়া কার্যকর থাকে না। কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা দেখেছি কীভাবে টিকা সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়েছে।
রেফ্রিজারেশন খাত বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমও। শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে যেমন— সুপারমার্কেট, ফ্রোজেন ফুড, ডেইরি ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এই প্রযুক্তি ছাড়া কার্যক্রম কল্পনাই করা যায় না।
তবে রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কও গভীর। অতীতে ব্যবহৃত অনেক রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ওজোন স্তর ক্ষয় এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে ভূমিকা রেখেছে। এজন্য বর্তমানে পরিবেশবান্ধব ও শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন— ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (টঘঊচ) এবং অঝঐজঅঊ, এই খাতে টেকসই উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছে।
বাংলাদেশেও এ খাতের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়ার কারণে দেশে এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বেছে নেওয়া, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং দক্ষ কারিগর গড়ে তোলার দিকেও নজর দিতে হবে।
বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তি শুধুমাত্র বিলাসিতা নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এই প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও বিকাশ মানব সভ্যতার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
আধুনিক পৃথিবীতে রেফ্রিজারেশন একটি মৌলিক চাহিদা। বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস আমাদের এই প্রযুক্তির গুরুত্ব অনুধাবন করতে এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। তাই, আমরা সবাই মিলে সচেতনভাবে এই প্রযুক্তিকে পরিবেশবান্ধব এবং অধিক কার্যকর করে তুলতে পারি।